রামুতে সন্ত্রাসী কায়দায় খাস ও মাদ্রাসার জমি দখল, হামলার শিকার ২ নারী

fec-image

রামুতে সন্ত্রাসী কায়দায় মাদ্রাসার খতিয়ানভুক্ত ও সরকারি খাস জমি জবর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের হাফেজপাড়া এলাকায় এ জবর-দখলের ঘটনা ঘটেছে। জমি জবর দখলে বাঁধা দেয়ায় অন্তত দুই জন নারী হামলার শিকার হয়েছেন ।

রাজারকুল মারকাযুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার (প্রস্তাবিত) পরিচালক ও জমিদাতা মাওলানা সিরাজুল মোস্তফা জানান, পাশ্ববর্তী চাকমারকুল ইউনিয়নের মৌজিমেরদ্বীপ এলাকার মৃত বদরুজ্জামানের ছেলে মোহাম্মদ আলম এবং দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব উমখালী গনি সওদাগরপাড়ার উম্মত আলীর ছেলে আবদুল মালেক ও আবু ছৈয়দের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন মাদ্রাসার নামে দানকৃত জমি এবং পাশাপাশি থাকা সরকারি মূল্যবান খাস জমি জবরদখলের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। তিনি ঢাকাতে বিশ্ব ইজতেমায় থাকার সুযোগে ভূমিদস্যু চক্রটি ভাড়াটে লোকজন নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি বিকালে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মাদ্রাসার খতিয়ানভুক্ত ও পাশ্ববর্তী খাস জমিতে পাকা খুঁটি ও শিকলের ঘেরাবেড়া দিতে শুরু করে। এসময় বাঁধা দেয়া জবর দখলকারীরা তাঁর মা নুরহাবা বেগম (৫০) ও বোন মনোয়ারা বেগম (২৭) লাটি-সোটা দিয়ে এবং শারীরিকভাবে মারধর করে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

এ ঘটনার পর রবিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা একই কায়দায় এ জমিতে দ্বিতীয় দফা হামলা চালিয়ে মাদ্রাসা ভবন নির্মাণের জন্য মুজদ করা নির্মাণসামগ্রীসহ জমিটিতে আরো ঘেরাবেড়া দিয়ে সেখানে একটি হাঙ্গামা ঘর নির্মাণ করে। জবর-দখল চলাকালে মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সিরাজুল মোস্তফা পুলিশের সহায়তা চেয়ে ৯৯৯ এ কল করেন। এরই প্রেক্ষিতে দুপুরে রামু থানার এএসআই আশরাফুলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যান। তবে এ নিয়ে কাউকে আটক করা হয়নি।

মাওলানা সিরাজুল মোস্তফা আরো জানান, নিজেদের পৈত্রিক ও ক্রয়সূত্রে প্রাপ্ত ৫ শতক জমি মারকাযুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসাকে রেজিস্ট্রি দলিলমূলে দান করে। পরবর্তীতে জমিটি এ মাদ্রাসার নামে খতিয়ানভুক্ত হয়। কিন্তু হামলাকারী ভূমিদস্যু চক্রটি মাদ্রাসার খতিয়ানভুক্ত এবং পাশ্ববর্তী খাস জমি জবর দখলের উদ্দেশ্যে ৩ বছর ধরে তাদের হয়রানি করে আসছে। এ নিয়ে রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), রামু থানা প্রশাসন, রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে একাধিকার অভিযোগ দেন। এসব অভিযোগের একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলেও জবর-দখলকারীরা এ জমির পক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। কিন্তু উল্টো এসব বিচারের তোয়াক্কা না করে জবর-দখলের এ হীন প্রচেষ্টা শুরু করেছে।

রাজারকুল মারকাযুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা (প্রস্তাবিত) পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও রাজারকুল আজিজুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মোহছেন শরীফ জানান, মাদ্রাসার নামে রেজিস্ট্রিকৃত ৫ শতক জমিতে জবর-দখলের ঘটনা দুঃখজনক। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব জমিতে লোভের বশবর্তী হয়ে এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। এখানে কারও মালিকানা থাকলে জমি রয়েছে। সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে নিতে পারে। তিনি মাদ্রাসার জমিটি রক্ষায় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা রামু থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এমিলন বড়ুয়া জানান, এখানে মাদ্রাসার জমি নিয়ে বিরোধ নিরসনে উভয় পক্ষকে নিয়ে সমাধানের জন্য বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দুপক্ষ সার্ভেয়ার নিয়োগ করে পরিমাপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি জানান, মাদ্রাসার জমি জবর-দখলমুক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জমি, নারী, রামু
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন