রামুতে ৪৫ ছাত্র-ছাত্রীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন অনিশ্চিত


কক্সবাজারের রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার কারনে ৪৫ জন ছাত্রছাত্রীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ক্ষুব্দ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফেলতির কারণে ফরম পূরণে ব্যাপক অনিয়ম, রেজিষ্ট্রশনে ভুলের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমরান, মারোয়ান, সরওয়ার কামাল ও সুপ্রিয়া দেবী জানান, করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ৮ম শ্রেণিতে তাদের রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। স্কুল খোলার পর প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারি রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার আশ্বাসে তাদের কাছ থেকে খরচ ও রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ টাকা নেন। ওইসময় বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তারা নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে তারা নবম শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য অনুরোধ জানালে প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারি তাদের ৮ম ও ৯ম শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশন এক সাথে করে দেয়ার আশ্বাস দেন। এহেন আশ্বাসে লেখাপড়া করে তারা দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন।
আগামি রবিবার তাদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। কিন্তু শেষ মূহুর্তে এসেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশপত্র দিতে পারেনি। ফলে তাদের এসএসসি পরীক্ষা দেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমনকি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিতে না পারলে তাদের আবারও অষ্টম শ্রেণি থেকে পড়ালেখা শুরু করতে হবে। অর্থাৎ তাদের শিক্ষাজীবন ৩/৪ বছর পিছিয়ে যাবে। তাদের মতো অভিভাবকরাও এটা কিছুতে মেনে নিতে পারছেনা।
এ ঘটনায় তারা গত ২৫ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোন সমাধানের লক্ষণ তারা দেখছেনা।
এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছ উদ্দিন জানান, তিনি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন কার্ডে তার বিভাগ উল্লেখ করা হয়েছে বাণিজ্য। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে বারবার তাগদা দেয়া সত্তে ও তা সংশোধন করা হয়নি। এছাড়া একদিন পর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে, কিন্তু তার প্রবেশপত্র বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিতে পারছে না।
এদিকে ক্ষুব্দ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে রামু চৌমুহনী স্টেশনে সড়ক অবরোধ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারির শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় দীর্ঘ যানজন সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। ওসি বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যায় ইউএনও সহ বৈঠক করে সমাধানের আশা দিলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা সড়ক থেকে সরে যান।
শিক্ষার্থীরা আরও জানিয়েছেন, নির্বাচনী পরীক্ষায় ৪টি বিষয়ে কৃতকার্য হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয়নি। কিন্তু ৮ বিষয়ে কৃতকার্য হতে পারেনি, এমন শিক্ষার্থীকে দেয়া হয়ে ফরম পূরণের সুযোগ। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে এভাবে চলছে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি।
রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশন ফরম পূরণে এভাবে অনিয়ম এবং নির্বাচনী পরীক্ষায় চরম ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারির এ ধরনের নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি নিয়ে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এনিয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফাহমিদা মুস্তফার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
লিখিত অভিযোগ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে আরও জানা গেছে, দশম শ্রেণির ১৪৭ জন ছাত্রছাত্রী নির্বাচনী পরীক্ষা ২০২২ এ অংশ নেন। এর মধ্যে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি।
নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে শাহরিয়াদ মো. সায়েফ, মো. রাশেদ খান, ফাহিম সরওয়ার, রাশেদুল ইসলাম ও লিমন শর্মা জানান, শারীরিক অসুস্থতা, অভিভাবকের মৃত্যু, পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাদের অনেকে নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেনি। কিন্তু সুযোগ দেয়া হলে তারা চুড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর আহমদকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। উল্টো ৮ বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকেও নিয়ম বহির্ভুতভাবে টাকা নিয়ে ফরম পূরণের অনুমতি দিচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অনেকের রেজিস্ট্রেশনে ভুলক্রটি ছিলো। এসব ভুল সংশোধনের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু রেজিষ্ট্রেশনের ভুল এখনো সংশোধন করা হয়নি। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর আহমদ ও অফিস সহকারি অনু বড়ুয়া শিক্ষার্থীদের চরম হয়রানি করছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে এসব অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফাহমিদা মুস্তফা জানিয়েছেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর আহমদ জানান, সকল শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে পাশ করার উপযোগি শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিছু অনিয়ম ও ভুলের জন্য তিনি বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মফিজুল আলম ও অফিস সহকারি অনু বড়ুয়ার গাফেলতি ছিলো বলে জানান।