রামু-মরিচ্যা সড়কে হাতি, নিত্য যানজটে দূর্ভোগ

fec-image

কয়েকদিন পর পর সড়কের উপর এসে পায়চারি করতে থাকে হাতির পাল। দু’পাশে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। এ দৃশ্য এখন নিয়মিত চোখে পড়ে কক্সবাজারের রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নে রামু-মরিচ্যা সড়কে। গত একমাসে হাতির কারণে এ সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে ১০ বারেরও বেশী।

গত ২৩ জুলাই রামু উপজেলা প্রশাসনের মৎস্য পোনা অবমুক্ত করণ অনুষ্ঠানে এসে সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন, সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। কারণ পোনা বহনকারি গাড়িটি আসতে দেরী হওয়ায় অনুষ্ঠান শুরু করতে পারেননি আয়োজকরা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন- ওইদিন খুনিয়াপালং ইউনিয়ন থেকে গাড়িটি আসার পথে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রামু-মরিচ্যা সড়কে যানজটে পড়ে। একটি বন্য হাতি সড়কের পায়চারি করতে থাকায় সৃষ্টি হয় এ যানজট। কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিলো যানবাহন চলাচল। এ কারণে অনেক বিলম্বে শুরু হয় পোনা অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠান।

সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল বিষয়টি স্বীকার করে বলেন-শুনেছি সাম্প্রতিক সময়ে বন্য হাতি প্রায়সময় ওই এলাকায় সড়কে এসে অবস্থায় নেয়। কখনো কখনো লোকালয়ে বসত ঘর ও ক্ষেতের ফসল বিনষ্ট করে। ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও।

বন্যপ্রাণী নিরাপদ আবাসস্থল হারিয়ে ফেলায় এভাবে লোকালয়ে বারবার হানা দিচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে সোমবার (৩ আগস্ট) বিকালে এ সড়ক দিয়ে রামু আসার পথে হাতির কারণে যানজটে আটকে পড়েন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত রামুর বাসিন্দা রজত বড়ুয়া রিকু।

তিনি জানান, রাজারকুল ক্যান্টনমন্টে এলাকায় রামু-মরিচ্যা সড়কে বন্য হাতি প্রায় দেড় ঘন্টা সড়ক ও আশপাশে অবস্থান নেয়। এ কারণে সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রী ও পথচারিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতংক।

তিনি আরো জানান-ওই এলাকার পাশে বনা ল থাকলেও সেখানে হাতির কোন খাবার নেই। গড়ে উঠা সামাজিক বনায়নে হাতির উপযোগি খাবার থাকারও কথা নয়। যে কারণে হাতিগুলো ক্ষুধার্ত হয়ে সড়ক ও লোকালয়ে চলে আসে।

সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বেশ কয়েকবার হাতির কারণে যানজটে পড়েছেন। এরমধ্যে হাতিকান্ডের ফলে একইদিন ২ বার (আসা-যাওয়া) দূর্ভোগে পড়েন বলেও জানান তিনি।

রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান জানিয়েছেন,সোমবার (৩ জুলাই) সকালে এবং বিকালে দু’দফা হাতি ওই সড়কে অবস্থান নেয়। একারণে যানজট সৃষ্টি হলে মানুষের দূর্ভোগ বেড়ে যায়। এসব এখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে।

তিনি আরো জানান-বনে হাতির খাবার আর নিপাপদ আবাস নেই। অনেক আগে এখানে হাতির খাবার হিসেবে কলা গাছের চাষাবাদ করার কথা শুনেছিলেন। কিন্তু তা কোথায় বা আছে কিনা তা তিনি জানেন না। এ নিয়ে বন বিভাগের দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে রামুতে বন্য হাতির এহেন দশার প্রেক্ষিতে হাতিসহ বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় ক্যাম্পেইন ও মানববন্ধন করা হয়েছে। গত ২৭ জুলাই রামু চৌমুহনী স্টেশনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে সেন্টার-ফর এনভায়রনমেন্ট-হিউম্যান-রাইটস এন্ড-ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিইএইচআরডিএফ)।

সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী মো. ইলিয়াছ মিয়া বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রামুসহ জেলার বিভিন্নস্থানে নির্বিচারে হাতি হত্যা করা হয়েছে। হাতির আবাসস্থল এবং খাবার উপযোগি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এছাড়া হাতিসহ প্রাণীর সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এটা ঠেকাতে হবে। এব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মৎস্য পোনা অবমুক্ত করণ, রামু, হাতির পাল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন