জমির উদ্দিন:
পার্বত্য এলাকায় ভুমি বন্দোবস্তি বন্ধ থাকায় ভুমি জটিলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে পাহাড়ীদের দখলিয় ভুমির কাগজ পত্র না ভুমি শক্তিশালী ভূমি দুশ্যদের লোলাপু দৃষ্টি পড়েছে অশিক্ষিত ও অসহায় গরীব দখলিয় জুম চাষীদের ভুমির দিকে। বান্দরবানের রুমা উপজেলায় শত বছরের নিজেদের ভোগদখলীয় জুম চাষের (পাহাড়ে বিশেষ পদ্ধতিতে চাষ) ভুমি হারাল এবার মারমা সম্প্রদায়ের ছয়টি পরিবার। অবৈধভাবে জবর দখল করে প্রায় ৪০ একর জায়গায় রাবার বাগান তৈরী করছে। প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোয়। অর্থ ও বাহুবলে ইউএনডিপি জেলা কর্মকর্তা খুশি রায় ত্রিপুরা অবৈধভাবে ৪০ একর ভুমি দখল করে নিয়েছে এমন অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের।
রুমা উপজেলা ৩৫৩নং কোলাদী মৌজা হেডম্যান (মৌজা প্রধান) শৈচিংথুই মারমা জানান, প্রথাগত ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আইন অনুযায়ী অনাবাদি জমি কিংবা পাহাড়ে যারা প্রথমে চাষ করে ভোগদখল করে থাকেন ওই জায়গা তার বা তাদের। এছাড়া প্রথাগত নিয়ম অনুসারে একজনের জুম চাষের জায়গায় অন্যজন প্রবেশ করতে পারেনা। ওই জায়গা প্রবেশ করতে হলে পূর্বের মালিকের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। পাহাড়িরা বেশিরভাগ জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। ওই জুমে বিভিন্ন সময়ে ধান থেকে শুরু করে মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, মারফা (এক ধরণের শসা), জব, ভুট্টা, তুলা, বেগুন ইত্যাদি চাষ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে।
জানা গেছে, নাইতং পাড়া স্থাপনের বয়স প্রায় ১০০ বছরের উর্ধ্বে। বংশানুক্রমে বসবাস করে আসছেন তারা। বর্তমানে ৬৫ পরিবার বসবাস করছে ওই পাড়ায়। সিংহভাগ পরিবার জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। পাড়াবাসিদের জুম চাষের জন্য প্রায় ৫-৬শত একর জায়গা রয়েছে। এরা অনেকে যৌথ কিংবা এককভাবে জুম চাষ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। প্রত্যেক পরিবারের পাঁচ একরের অধিক কিংবা তারও কম একরের জায়গা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ছয়টি পরিবার হলো চিংসুনু মারমা, চশৈ মারমা, ক্যম্রাসিং মারমা, শৈহ্লাচিং মারমা, ক্যমুইচিং মারমা ও অংশৈসিং মারমা। এদের জুম চাষের ভূমি জোর পূর্বক দখল করে রাবার বাগান করেছে ইউএনডিপি জেলা কর্মকর্তা।
অংশৈসিং মারমা ও তার ছেলে উচপ্রু মারমা জানান, তাদের জুমের জায়গার পাশাপাশি অর্জুন ত্রিপুরা পাড়ার জায়গা। অর্জুন কার্বারীর ছেলে খুশি রায় ত্রিপুরা। জায়গা দখলের প্রক্রিয়া হিসেবে জুমের ক্ষেতে প্রথমে গবাদি পশু ছেড়ে দিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। এরপর জোর করে রাবার গাছ লাগিয়ে জায়গা দখল করা হয়েছে। তাদের মতো আরো পাঁচটি মারমা পরিবারের জায়গা দখল করেছে ইউএনডিপি কর্মকর্তা খুশি রায় ত্রিপুরা। অবৈধ ভাবে দখল করে প্রায় ৪০ একর জায়গাতে রাবার গাছ লাগানো হয়েছে।
ইউএনডিপি জেলা ম্যানেজার খুশি রায় ত্রিপুরা জানান, তিনি কারো জায়গা অবৈধভাবে দখল করেননি। যেখানে তিনি প্রতিষ্ঠানের একজন হয়ে ও ব্যক্তিগতভাবে মানুষের অধিকারের কথা বলেন। সেখানে সাধারণ মানুষের অধিকার খর্ব করার প্রশ্নই আসেনা। তিনি নিজেদের জায়গায় রাবার বাগান করেছেন।
নাইতং পাড়া কার্বারী (পাড়া প্রধান) মেদুক মারমা পাড়াবাসিদের জায়গা অবৈধ দখল হওয়া সর্ম্পকে প্রথমে বলতে না চাইলেও পরে তিনি স্বীকার করেন, ওই জায়গা নাইতং পাড়াবাসীর। ওই জায়গায় ক্ষতিগ্রস্থরা জুম চাষ করতো।
কোলাদী মৌজা হেডম্যান শৈচিংথুই মারমা জানান, জোরপূর্বক দখল করে রাবার বাগান লাগানোর ব্যাপারে কার্বারী তাকে জানিয়েছেন। ওই জায়গাটি নাইতং পাড়াবাসিদের। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারেরা লিখিতভাবে অভিযোগ না করায় তিনি ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
রুমা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈবং মারমা জানান, তাকে এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিতভাবে অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।