রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদ যেন ভূতের ভবন, নেই জনপ্রতিনিধি
বান্দরবান থানচি উপজেলায় ১ নং রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদের ভবন থাকলেও নেই কোনো কার্যক্রম। পরিষদ দুইটিতে ২০১২-১৩ সালে কোটি টাকার ব্যয়ের ভবনটি নির্মাণ করলেও এখন তা ও অরক্ষিত। অরক্ষিত ভবনটিকে ২০২৩ সালের সংস্কার করা হলে ও ভবনের চারপাশে তৈরি হয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করছেন পশু প্রাণী। ভবনের মাদকসক্তদের আনাগোনা দেখা গেছে এ ভবনটিকে ঘিরে। জনপ্রতিনিধিদের অবহেলার ফলে পরিষদে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত কয়েক হাজার পাহাড়ি সম্প্রাদায়ের মানুষ। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারা।
চেয়ারম্যান ও সচিবরা থানচি সদর ও বান্দরবান সদরে ভাড়া বাসা নিয়ে কাজ চালান। তাই ভবনটি সাধারণ জনগণদের সেবাগ্রহণ সচল করে নাগরিকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা কর্মকাণ্ডে গতিশীল করার দাবি জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের ভবন থাকার শর্তেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সে সব অফিসের কার্যক্রম উপজেলা সদর ও বান্দরবান শহরে উজানি পাড়া বাসা ভাড়া নিয়ে কাজ চালাচ্ছেন রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা ইউপি সচিব উশৈওয়াং মারমা। ফলে জন্ম নিবন্ধন থেকে শুরু করে জরুরী চেয়ারম্যান সনদপত্রসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা পেতে দূর্গম নদীর পথে ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিয়ে যেতে হয় শহরে। হাতের নাগালে পরিষদ ভবন থাকলেও জনপ্রতিনিধিরা অকেজোভাবে ফেলে রাখার ফলে সেবা নিতে শহরের আসা-যাওয়া খরচ গুনতে হয় দ্বিগুন টাকা। এতে যেমন নৌকা ভাড়া ও অনুসাংঙ্গিকসহ ব্যয়বহুল তেমনি ভোগান্তি মুখে পড়তে হয় দুর্গম বাসিন্দাদের। তাছাড়া অধিকাংশ সময় সনদপত্রে স্বাক্ষর কিংবা বিভিন্ন নাগরিক সেবা পেতে নানা সমস্যা মুখে পড়েন স্থানীয়রা।
সরেজমিন দেখা গেছে, রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি রেমাক্রী বাজারে পূর্ব পাশে অবস্থিত। ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। নেই কোনো পরিষদের কার্যক্রম। আশপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ও ভাঙ্গনে মুখে ভবন। ভবনের বিভিন্ন অংশে গজিয়েছে আগাছা। গত বছরে সংস্কার করা হলেও অধিকাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঘরের দরজা-জানালা ও ভবনের প্লাস্টার। পাশের ড্রেন ও স্তূপ থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছি। অকেজোভাবে পড়েছে বাইরে রাখা সোলার প্যানেলও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেমাক্রী ইউনিয়নের ৯২টি গ্রামে প্রায় ১৮ হাজার মানুষের বসবাস। সেসব দূর্গম বসবাসকারী নাগরিকদের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু ও চেয়ারম্যান সনদসহ একমাত্র ভরসা রেমাক্রী বাজারে পুর্ব পাশের থাকা পরিষদের ভবনটি। কিন্তু হাতের নাগালে ভবন থাকলেও নাগরিক সেবা ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দূর্গম এলাকার বাসিন্দারা। জরুরী প্রয়োজনে সেবা নিতে দ্বিগুন টাকা খরচ করে দুর্গমপথ পাড়ি দিয়ে থানচি উপজেলা সদর ও বান্দরবান জেলা সদরে গিয়ে সেবা নিতে আসতে হয় তাদের।
আরও জানা গেছে, পরিষদ ভবনটি সাত থেকে আট বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। মাসিক সমন্বয় সভা ও সরকারী কর্মসূচী থাকলে পরিষদ ভবনটি তালা খোলেন জনপ্রতিনিধিরা। তাছাড়া পশুপ্রাণী ছাড়া চেয়ারম্যান, মেম্বার, মহিলা মেম্বারসহ গ্রাম পুলিশ সদস্যরাও আসেন না পরিষদ ভবনটিতে। নানা অজুহাত দেখিয়ে অকেজো ভাবে ফেলে রেখে থানচি সদরে টংতমাং গেস্ট হাউজ ও বান্দরবানে উজানি পাড়া চেয়ারম্যানের বাসা অস্থায়ী ভবন হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যক্রম শুরু করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। সে ভবনে বসে পরিষদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি ও অনান্য সদস্যরাও। এতে নানা সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেসব ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
বড় বাজার পাড়া বাসিন্দা চসিংমং মারমা বলেন, চেয়ারম্যান বলেছে এখনে ইন্টারনেট টাওয়ার আসবে, বিদ্যুৎ আসবে এসব অজুহাত দেখিয়ে বান্দরবান ও থানচি সদরে অফিস করছে। এখানে ভবন থাকলেও মাসের ৩০ দিনই বন্ধ থাকে। আর চেয়ারম্যান নির্বাচন আগে বলেছিল আমি সব কিছু করব, আর এখন বাড়ির কাছে পরিষদ ভবন থাকলেও যেকোন সনদ পত্র নিতে দ্বিগুন টাকা খরচ করে উপজেলা শহরে যেতে হয়। তাহলে ভবন তৈরী করার কি প্রয়োজন ছিল?
মুঠোফোনে যোগযোগ করা হলে ইউনিয়ন পরিষদের সচীব উশৈওয়াং মারমা বলেন, আমি আড়াই বছর হয়েছে এ ইউনিয়নের সচিব পদে যোগদান করেছি। চেয়ারম্যান নির্দেশ মোতাবেক আমাকে চলতে হয়েছে। আমাকে থানচি সদরে টংতমং রেস্টুরেন্টে একটি কক্ষ নিয়ে দিয়েছে কাজ করার জন্য সেখানে করতেছি। মুঠোফোন রিসিভ না করার চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি বক্তব্য নেয়ার সম্ভব হয় নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেমাক্রী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি একজনে চারটি কাজ করেন। তিনি সিংগাফা মৌজা হেডম্যান, সরকারী ঠিকাদারী, ও আওয়ামী লীগের ইউনিয়নের সভাপতি ও উপজেলা পর্যায়ে যুগ্ম সম্পাদক । দলীয়, ঠিকাদার, হেডম্যান কাজের ব্যস্ত থাকায় ইউনিয়নের কম সময় দেন তিনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মো. এ্যামদাদুল হক বলেন, উপজেলার ১নং রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি ২০২৩ সালে সংস্কারের কাজ শেষে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, পরিষদ ভবন থেকেও কার্যক্রম বন্ধ রাখা বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সরকার থেকে নির্দেশনা আছে পরিষদের বসে জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রম চালাতে হবে। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছি এবং তদন্তের সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।