parbattanews

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে ‘নামের’ পড়ালেখা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুলে শিশুরা

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুদেরকে নামের পড়ালেখা করানো হচ্ছে। প্রকৃত ও নির্দিষ্ট নিয়মে পড়ালেখা করাচ্ছেনা এনজিও সংস্থাগুলো। এবার এমন অভিযোগই উঠে এসেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের স্কুলে শিশুদের অনুপস্থিতি ও শিশুদের পড়ালেখার প্রতি অমনোযোগ। জানা যায়, এসবের মূল হেতু এনজিওদের নিয়োগকৃত শিক্ষকদের অবহেলা ও তাচ্ছিল্য। দৃশ্যমান তারা ঠিক মতো ক্লাস না করে ফাঁকি দিয়ে বেড়ায়। ক্লাসে পড়ানোর নাম করে অযাচিত সময় পার করেই দিন যাপিত হয় তাদের। মাস শেষে বেতন তো আছেই।

এদিকে শিক্ষকদের এমন আচরণের ফলে রোহিঙ্গা শিশুরাও বাস্তবিক পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। শিক্ষকদের এসব দেখে তারাও পড়ালেখা করার ইচ্ছা শক্তিও হারিয়ে ফেলছে ক্রমান্বয়ে। নতুন নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা হলে নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকতো বলে জানা যায় কিন্তু বর্তমানে অনুরূপ উপস্থিতির দেখা মেলেনা সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীর।

অভিযুক্তরা বলেন, “এরকমও দৃশ্যমান যে একজন শিক্ষার্থী কয়েকদিন স্কুলে এসে পরে আর আসতে চাইনা। সপ্তাহে ৩ দিন এলে বাকি ৩ দিন আসতে চাইনা অনেক শিক্ষার্থী। স্কুলমুখী না হয়ে অনেকেই খেলাধুলায় সময় পার করছে। কখনো দেখা যায় শিশুরা ত্রাণ নিতে গিয়ে স্কুলে উপস্থিত হতে পারেনা। আর কেউ কেউ অহেতুক আসতে চায় না। অন্যদিকে ঘনিষ্ঠভাবে শিক্ষকগুলোও সঠিক সময়ে স্কুলে উপস্থিত থেকে ক্লাস করে না।”

বলা যায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কমে এসেছে পড়ালেখার কদর। স্কুলের পরিবেশের ভারসাম্য নাই ঠিক। এভাবে চলতে থাকলে রোহিঙ্গা শিশুদের কিইবা পরিবর্তন আসতে পারে। দেখা যায় শিশুরাও স্কুলে এসে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করে, মারামারি ধরাধরি ও দুষ্টামি করেই সময় কাটিয়ে দেয়। অনুরূপ শিক্ষকদের চাপ নেই শিক্ষার্থীদের উপর। এনজিওরা কি শেখাচ্ছেন তাঁদের। রোহিঙ্গা শিশুদের এখনো পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি।

কতগুলো রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে উপলব্ধি করা যায়, তারা স্কুল যথেষ্ট উপভোগ করছে। যদিও তারা এখনো এটা বুঝেনা পড়ালেখা করে কি হবে ভবিষ্যতে। তাদের কেমন পড়ালেখা শেখানো হচ্ছে সেটা নিয়ে তাদের কৌতুহল নেই, নেই প্রতিবাদ। শিশুরা স্কুলে এসে মজা পায় রঙ্গ করে এমনটাই বুঝা যায় তাদের বুলিতে। কড়াকড়ি নেই স্কুলে। খেতে বিস্কুটও পায় তারা এবং আরো বিভিন্ন সরঞ্জামাদিও পায় খেলনার। তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত উপস্থিত থাকে অনেকেই থাকে না।

এদিকে এমন অকাট্য আচরণ স্থানীয়দের দৃষ্টি কড়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন,”অন্তত এদের শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষের দলে আনা উচিৎ। একে তো এদেশে আসার পর থেকেই স্থানীয়দের মাথা খাচ্ছে। এখন দেখি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এই জাতি। যা আগামীতে ভয়ংকর রূপে রূপান্তরিত হবে এবং নতুন প্রজন্মের উপর প্রভাব ফেলবে।”

তারা আরো মনে করেন, ” পত্রিকায় দেখি রোহিঙ্গাদের অনিয়ম, অস্ত্র নিয়ে আটক, চোরা চালান করছে, পালিয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি। তাই এনজিওদের থেকে এটাই আশা করা যায় এই আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুদেরকে শিক্ষার মাধ্যমে অন্তত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে না জড়িয়ে যায় এমন করে গড়ে তোলা হোক। অন্যথায় দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু শিক্ষকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, “আমরা যতটা সম্ভব রোহিঙ্গা শিশুদের স্কুলমুখী করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা তাদের অভ্যাসের পরিবর্তন হতে দেখছি খানিকটা। গার্জিয়ানরাও সচেতন হচ্ছেন দিনদিন। পড়ালেখা নিয়ে গুরুত্বারোপ করছেন তাদের ছেলে-মেয়েদের উপর।”

তারা আরো বলেন, “এখন শিশুরা তাদের নাম ও পরিবারের সদস্যদের নাম নিজেরা লিখতে শিখেছে। বর্তমানে তাঁরা বার্মিজ (নিজস্ব ভাষা) ও ইংরেজি বিষয়ে শিখছে প্রাথমিকভাবে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক ও নৈতিকতা নিয়ে (যেমন ক্যাম্পে চলাফেরার নিয়মকানুন ও দিকনির্দেশনা) শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।”

এ ব্যাপারে জানতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে উল্লেখ্য বিষয়ে তারা মুখ খোলেননি।

Exit mobile version