রোহিঙ্গাদের ছাড়াই মিয়ানমারে নির্বাচন শুরু হয়েছে : রাখাইনে হচ্ছেনা ভোট 

fec-image

রোহিঙ্গাদের ছাড়াই মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।  এবারের নির্বাচনে রাখাইনসহ সংঘাতময় ৫৬ শহরে ভোট হচ্ছে না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে পাত্তা না দিয়ে ভোটগ্রহণ চলছে।

রোববার (৮ নভেম্বর) শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। এবারের মিয়ানমারের নির্বাচনে ৯১টি দল থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি এবং সেনা সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি পার্টির মধ্যে। সংবিধান অনুযায়ী তাতমাদও বা সেনা সদস্যদের ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। নিবন্ধিত ভোটার ৩ কোটি ৭০ লাখ। যার ৫০ লাখই তরুণ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৫ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করায় প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে এবারের ফল। সবশেষ জনমত জরিপ বলছে, এ মুহুর্তে সু চির দলকে ফের ক্ষমতায় চায় ৭৯ শতাংশ মানুষ।

রোহিঙ্গা অধুষ্যিত রাখাইনে সুযোগ নেই ভোটের। কোভিড১৯ এর কারণে, নির্বাচন স্থগিতের দাবিও তুলেছিলো অন্তত ২০ টি রাজনৈতিক দল। কিন্তু তা ধোপে টিকেনি।

রোহিঙ্গা নিপীড়নসহ নানা কারণেই সুচির ভাবমূর্তি ম্লান হয়ে গেছে। রাজনীতি থেকে সেনা সম্পৃক্ততা অপসারণ ছিলো সু চির এনএলডির অন্যতম প্রতিশ্রুতি। যদিও ৫ বছরে এসবের কিছুই পূরণ করতে পারেননি তিনি। অভিযোগ আছে, রোহিঙ্গাসহ ১৩৫ টি ক্ষুদ্র ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নেননি সুচি। বরং তার শাসনামলে উচ্ছেদ করা হয়েছে এদের।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, সংঘাতপূর্ণ রাখাইন, শানের মতো বিভিন্ন এলাকায় হচ্ছে না, ভোট। ফলে ভোটাধিকার বঞ্চিত ১৫ লাখেরও বেশি।

মিয়ানমারের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিচার্ড হর্সি বলেন, সু চির আমলে দেশে সুশাসন কিংবা অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। যারা তাকে সমর্থন করে, এটা একান্তই ব্যক্তিগত এবং আবেগের বশবর্তী হয়ে। সুচি সরকার ফের ক্ষমতায় আসলেও ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীগুলো তার ওপর নাখোশই থাকবে, কারণ তাদের ভোটাধিকার ও নেতৃত্ব বঞ্চিত করা হয়েছে।

২০১৫ সালে নির্বাচনে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে সরকার গঠন করলেও, আগের সেনা সরকারের করা আইনে, শেষমেষ প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্টের পদে বসতে পারেননি সু চি। বরং সরকার প্রধান হিসেবে স্টেট কাউন্সিলর নামে আলাদা পদ তৈরি করা হয় তার জন্য।

সম্প্রতি ইউএসডিপির নেতা উ থান থে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমারের দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই।

বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের নির্বাচনের দিকে নিবিড় দৃষ্টি রাখছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের নতুন সরকারের মনোভাব কেমন হয় সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগ নিতে চীন প্রস্তুত আছে। প্রতিবেশী ভারতেরও অবস্থান রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের পক্ষে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপে রেখেছে। নির্বাচনের পর মিয়ানমারের নতুন সরকারের ওপর এ চাপ আরো বাড়বে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো ধারণা করছে।

মিয়ানমারে আজকের নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে, তা নিয়ে এরই মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। সংঘাতের আশঙ্কায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অনেক এলাকায় নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে।

২০১৫ সালে মিয়ানমারের নির্বাচনে নানা ত্রুটি থাকলেও সামরিক শাসন-পরবর্তী প্রথম নির্বাচন হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়েছিল। এবারের নির্বাচন ২০১৫ সালের চেয়েও ত্রুটিপূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচনের আগে রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘুদের ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের সমাজে, সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় তাদের কোনো অংশগ্রহণ থাকছে না। নির্বাচনী প্রচারেও সংখ্যালঘুবিরোধী উসকানি ছিল। সরকার বা কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করলেই রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে।

‘বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকে’ নামের একটি সংগঠন গতকাল শনিবার অভিযোগ করেছে, অং সান সু চির সরকার নির্বাচনের প্রাক্কালে ২২৯ জন রাজনীতিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। ৫৮৪ জন রাজবন্দি বর্তমানে মিয়ানমারের কারাগারে বিচারের অপেক্ষায় আছেন। এর বাইরে এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়েছে। আজকের নির্বাচনে তাদের কেউই ভোট দিতে পারবে না। সংগঠনটির অভিযোগ, সু চির সরকার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের আগে রাজনীতিবিদদের মুক্তি দেয়নি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সবচেয়ে বড় ধরনের দমন-পীড়ন চলেছে সু চির সরকারের আমলে।

সূত্র : রয়টার্স।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জাতিসংঘ, মিয়ানমার, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন