parbattanews

রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে; হুমকির মুখে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় এলাকায় যানবাহন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম অনেকাংশে বেড়েছে। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে এক দুর্ভোগ। সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত যানবাহন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে খেটে খাওয়া মানুষের দৈনিক মজুরি কমে গেছে বলে এ জরিপে উঠে এসেছে।

সুত্রে জানা গেছে, বিপূল সংখ্যক রোহিঙ্গা উপস্থিতির কারনে উখিয়া-টেকনাফের মানুষের সার্বিক ক্ষেত্রে প্রভাবিত করেছে। এমনকি যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানান ক্ষেত্রে এক দুর্বিসহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হারিয়েছে খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষেত খামারের জমি, হতদরিদ্র পরিবারের বসতভিটা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, সামাজিক অবস্থা। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে জীববৈচিত্র, সবুজ বেষ্টনী গাছ-পালা।

সম্প্রতি ইউএনডিপি ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বড় সংখ্যায় উপস্থিতি বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কাও তৈরি করেছে।বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘খুব দ্রুতই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। এর আগে মিয়ানমারের ভূমিকার কারণেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হয়েছে।’

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা একসঙ্গে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে এসে আশ্রয় নেওয়ার পর খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা বিপুল হারে বেড়েছে। এর ফলে ওই এলাকায় প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৭ সালের আগস্টের আগে মোটা চাল প্রতি কেজির দাম ছিল ৩২ টাকা, পরে হয়েছে ৩৮ টাকা। আটার দাম আগে ছিল ২৮ টাকা, পরে হয়েছে ৩৫ টাকা। আলুর দাম ছিল ২২ টাকা, পরে হয়েছে ৩০ টাকা। লবণের দাম ছিল ২২ টাকা, পরে হয়েছে ২৫ টাকা। বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির দাম গড়ে প্রতি কেজি ছিল ২৫ টাকা, পরে হয়েছে ৩০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৪৪০ টাকা, এখন হয়েছে ৫০০ টাকা। বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম আগে গড়ে ছিল ১৩০ টাকা প্রতি কেজি, পরে হয়েছে ১৫০ টাকা।

এর পাশাপাশি খেটে খাওয়ার মানুষের দৈনন্দিন মজুরিও কমে গেছে– উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের আগস্টের আগে একজন কৃষি মজুরসহ অন্যান্য দিনমজুরের গড়ে প্রতিদিন আয় ছিল ৪১৭ টাকা। সেই আয় কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৫৭ টাকা। সার্বিকভাবে টেকনাফ উপজেলায় দিনমজুরের আয় কমেছে ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ, উখিয়া উপজেলায় আয় কমেছে ১৭ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং কক্সবাজার জেলার অন্য অংশে আয় কমেছে ৬ দশমিক ৬৭ অংশ।

এ এলাকায় ২ হাজার ৫০০ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এবং ১ হাজার ৩০০শ’র বেশি পরিবার অতিদরিদ্র হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে পরিবেশ বিপর্যয় সম্পর্কে বলা হয়, এরই মধ্যে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ একর সংরক্ষিত বনভূমি উজাড় হয়েছে এবং প্রায় ১ হাজার ৫০০ একর বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিপূল সংখ্যক রোহিঙ্গা আগমনের ফলে উখিয়া সার্বিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যসহ সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যানবহন চলাচলের ক্ষেত্রে এ দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

Exit mobile version