parbattanews

রোহিঙ্গাদের দখলে ৬ হাজার বনভূমি; অবৈধ করাত কলে চলছে কাঠ চিরাই

জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রয় নিয়েছে উখিয়া-টেকনাফে। এ সব রোহিঙ্গারা প্রায় ৬ হাজার একর বন ভূমির জায়গায় ঝুপড়ি নির্মাণ করে বসতি গড়ে তুলেছে। বিপূল পরিমাণ রোহিঙ্গা অবস্থানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় এক শ্রেণীর বনসম্পদ ধ্বংসকারী মহল রোহিঙ্গা বস্তি সংলগ্ন এলাকা সৃজিত সামাজিক বনায়ন শেষে শুরু করে বিভিন্ন গাছ-গাছালি নিয়ে আসছে। আর উক্ত কাঠ বেআইনী ভাবে স্থাপিত করাত কলে দিবারাত্রি চোরাই কাঠ চিরাই বাণিজ্য করে আসলেও সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের কোন খবর নেই।

এতে বন বিভাগের রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনজ সম্পদ ইতিমধ্যে সাবাড় হয়ে গেছে। এমনকি এই বন সম্পদ ধ্বংস চক্রের নিকট থেকে রেহাই পাচ্ছেনা স্থানীয় গ্রামীণ বসতভিটার ফলজ, বনজ বৃক্ষ, সড়ক ও উপ-সড়কের ছাঁয়া বৃক্ষ, ব্যক্তি মালিকানাধীন বনায়ন। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হয়ে প্রাকৃতিক নানান বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট বনবিভাগ বলছেন, লোকবল সংকটের কারণে তা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছেনা। সুত্রে জানা গেছে, এক কালের বন সম্পদে ভরপুর এ উপজেলার ২৪ হাজার হেক্টর বনজ সম্পদ রক্ষার মহা পরিকল্পনা নিয়ে ১৯৮৭ সনে তৎকালীন সরকার লট নিলাম প্রথা বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি এ উপজেলায় করাত কল পারমিট সরবরাহ নিষিদ্ধ করে। উচ্চ আদালতের আইনী জটিলতার সুযোগ নিয়ে উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের মাতবরপাড়ায় ১টি স’মিলে নির্বিচারে বৈধ-অবৈধ কাঠ চিরাই অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি এলাকার কতিপয় রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রকাশ্যে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত বন এলাকায় সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে করাত কল স্থাপন করে চোরাই কাঠ চিরাই বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বনভূমির জায়গা দখল করে আশ্রয় নেওয়ায় বন সম্পদের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ে।  এহেন পরিস্থিতিতে নির্বিঘ্নে নিরাপদে চোরাই কাঠ মজুদ, চিরাই ও বাজারজাত অবাধ সুযোগ থাকায় সংঘবদ্ধ বনদস্যু চক্র ও কাঠ চোরের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে।

স্থানীয় বন বিভাগ মাঝে মধ্যে লোক দেখানো ও দায় এড়ানোর অভিযান চালিয়ে ২/৩টি করাত কল অবকাঠামো ধ্বংস করলেও সংঘবদ্ধ করাত কল সিন্ডিকেট পুনরায় রাতারাতি কল স্থাপন করে কাঠ চিরাই অব্যাহত রেখেছে।

বন বিভাগের তালিকা মতে এ উপজেলায় ১৩টি অবৈধ করাত কল চালু থাকার কথা স্বীকার করলেও মুলত বিভিন্ন স্থানে ২২টি অবৈধ করাত কল চালু রয়েছে। তৎমধ্যে পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, পুর্ব রহমতের বিল, তাজনিমার খোলায় ৫টি, কুতুপালং ১টি, ফলিয়া পাড়া ২টি, হাজির পাড়া ৩টি, টাইপালং ১টি, পশ্চিম ডিগলিয়াপালং ১টি, পিনজির কুল ১টি, হিজলিয়া ১টি, জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি ১টি, কোট বাজার ১টি, মাতবর পাড়া ২টি, ও মরিচ্যা ৩টি সহ মোট ২২টি অবৈধ করাত কলে দিনরাত হাজার হাজার ঘন ফুট চিরাই কাঠ সাইজ করা হচ্ছে।

করাত কল থেকে চিরাইকৃত এ সব কাঠ স্থানীয় হাট বাজারে অবাধে বিক্রি ও বিভিন্নস্থানে চালান হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সরকারী বনাঞ্চলের কাঠ সম্পদ লুটপাট ও সাইজ করে পাচার হওয়ার ফলে সরকার বনসম্পদ খাতে কোটি টাকার রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

উখিয়ার বন রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বনবিভাগের লোকবল সংকটের কারনে শত চেষ্টা করেও বন সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের পর উখিয়া বন ভূমিতে মারাত্মক ভাবে প্রভাব পড়েছে দাবী করে তিনি বলেন, অবৈধ করাত কল জব্ধে বনবিভাগ সবসময় অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে অভিযানের আগে মালিকেরা খবর পেয়ে যাওয়ার কারনে সঠিক ভাবে অভিযান সফল হচ্ছেনা।

Exit mobile version