parbattanews

রোহিঙ্গাবাহী নৌকা ডুবিতে ৭জনের লাশ উদ্ধার

টেকনাফ প্রতিনিধি:

প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। তারা আসছেন এবার নির্যাতন নয়, ক্ষুধার জ্বালায়। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রাতের আঁধারে এপারে ঢুকছে। সীমান্তের নাফনদীর শাহপরীরদ্বীপের দক্ষিণপাড়া, জালিয়াপাড়া, ঘোলারচরসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু এ পারে প্রবেশ করেছেন।

ওই পয়েন্টগুলোতে প্রশাসনের কড়াকড়ির ফলে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে মঙ্গলবার(৩১ অক্টোবর) সকালে টেকনাফ ও উখিয়ায় পৃথক দু’টি নৌকা ডুবির ঘটনায় ৭জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ৭জনের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। অন্যান্যদের নাম পাওয়া যায়নি। এরা হলেন, মিয়ানমারের বুচিডং ইয়ংচং এলাকার মো. ইসলামের পুত্র এনামুল হাসান (৪), আলী জোহারের মেয়ে মিনারা বেগম (৫), আবুল হাশেমের স্ত্রী জুহুরা বেগম (৬০)।

বেঁচে যাওয়া জাবেদ নামে এক রোহিঙ্গা জানান, মিয়ানমার সীমান্তের দমংখালী থেকে রাতের বেলায় এক নৌকার ৩০-৩৫জনের নারী-পুরুষ ও শিশু এপারে আসতে পাড়ি দেয়। প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়ে রাত ১২টার দিকে টেকনাফ উপকূলে পৌঁছে। মহেশখালীয়া পাড়ার সৈকত পয়েন্ট দিয়ে রাতের আঁধারে কূলে ভিড়ার সময় বড় ঢেউয়ের কবলে পড়লে নৌকা ডুবির এঘটনা ঘটে। এসময় নৌকায় থাকা রোহিঙ্গারা সাঁতরিয়ে কূলে উঠলেও দুই শিশুর মৃত্যু ঘটে এবং এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। এঘটনায় কয়েকজন শিশুর অবস্থা বেগতিক হলে টেকনাফ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বুছিডংয়ের রহিমা নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, মিয়ানমারের সীমান্তের ধংখালীর বালুচরে নৌকার জন্য অপেক্ষায় থেকে এক মাস একদিন পর এপারে আসতে পেরেছে। সেখানে আরো শত শত রোহিঙ্গারা থাবু গেড়ে নৌকার অপেক্ষায় রয়েছে। সে আরো জানান, খাদ্যের অভাবে ক্ষুধার জ্বালায় এপারে আসছে। তার স্বামীও তাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেছে জানেনা। আত্মীয় স্বজনদের সাথে ২ ছেলেকে নিয়ে তাদের পিছু নিয়ে দেশ ত্যাগ করেছে। এপারে এসে কূলে ভিড়ার সময় ঢেউয়ের কবলে পড়ে নৌকা থেকে ছিটকে তার এক ভাইপোর ছেলের মৃত্যু হয়েছে ও তার এক ছেলেকে মূমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকে বলেছেন, মিয়ানমারে নির্যাতন এখনো কমেনি। তারা নির্যাতনের ধরণ ও কৌশল পাল্টিয়েছে মাত্র। পালিয়ে আসা বেশির ভাগ রোহিঙ্গা রাখাইনের বুছিডং ও রাছিডং থানার বাসিন্দা।

টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান মিয়া জানান, রাতে একটি রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় ২ শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা এবং আরো ৫জন নিখোঁজ রয়েছে বলেও জানান।

বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওঃ আজিজ উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারটি বাহারছড়ার উপকুল দিয়ে অনুপ্রবেশকালে কোস্টগার্ড বাধা প্রদান করেন। কোস্টগার্ডের ধাওয়া খেয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারটি ইনানীর দিকে চলে যায়।

বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কাঞ্চন শামলাপুর পয়েন্ট থেকে ৩জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের লাশ উদ্ধার ও ৩২জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আরও ছয়জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২৯ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী ২৮টি নৌকাডুবির ঘটনায় প্রায় ২’শ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

Exit mobile version