parbattanews

রোহিঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থ হতদরিদ্র স্থানীয়দের সহায়তায় সেবা সংস্থাগুলো

আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের ব্যানারে গড়ে ওঠা মিনি গার্মেন্টসে কাজ করছেন স্থানীয়রা

মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপি এবং রাখাইন উগ্রবাদীদের হাতে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা উখিয়ায় আশ্রয় নেয়ার পর থেকে স্থানীয়রা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্থানীয়দের পক্ষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটি জোরালো প্রতিবাদের দাবিতে টনক নড়ে ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন সেবা সংস্থার। যার প্রেক্ষিতে ইউএনএইচসিআর, ব্রাক, মুক্তি গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে স্থানীয় হতদরিদ্র পরিবারদের এককালীন বা সঞ্চয়ী আমানতের অর্থ প্রদানের কারণে এ সব হতদরিদ্রদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে বলে অনেকের দাবি।

তারা বলছেন, এক সময় তারা দু-বেলা, দু-মুঠো অন্ন যোগার করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। আজ তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ছেলে মেয়ে নিয়ে পারিবারিক জীবন যাপনে সক্ষম হয়েছেন। এ জন্য ঐসব সুফল ভোগী পরিবারগুলো ইউএনএইচসিআর, ব্রাক এবং মুক্তি নামক সেবা সংস্থাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

উক্ত সেবা সংস্থার অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত উখিয়ার মধ্যমনি রাজাপালংয়ের জাদিমোরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ইউএনএইচসিআর অর্থায়নে ব্রাকের সার্বিক সহযোগীতায় আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের ব্যানারে গড়ে উঠেছে একটি মিনি গার্মেন্টস। ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি সেলাই মেশিন, কাপড়, ডিজাইন ও পোশাক তৈরীর কাজ চলছে। মহিলা পোশাক তৈরি শ্রমিকদের সকলেই স্থানীয়।

উখিয়ার কোটবাজার গ্রামের রোজিনা নাছরিন নাজমা নামের এক পোশাক শ্রমিকের সাথে আলাপ করা হলে সে জানায়, বাড়িতে বেকার জীবন কাটিয়ে আসছিলাম। কাছেই একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার খবর পেয়ে সেখানে এনজিও ব্রাকে চাকুরী নিলাম যাতায়াত ভাড়া বাবদ ১৭ শ টাকা ছাড়া বেতনবিহীন। তবে পোশাক তৈরিতে পারদর্শি হলে কাজ অনুপাতে পারিশ্রমিক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়ায় আমি কাজে লেগে গেলাম। বর্তমানে আমি কামিজসহ ছেলেমেয়েদের আড়ংয়ের পোশাক তৈরি করতে সক্ষম বিধায় আমি ৮ হাজার টাকা ভাতা পাই ।

উখিয়ার সিকদারবিল গ্রামের নাছিম আক্তার জানালেন, সে এখানে ৫ মাস ধরে কাজ করছেন। তাকে ১ম মাসে যাতায়াত ভাড়া বাবদ ১৭শ, ২য় মাসে ২৮শ ও চলতি মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে আরো বাড়বে। এভাবেই প্রায় ৩৬জন স্থানীয় বেকার মহিলার কর্মসংস্থান হওয়ায় তারা আশাবাদী এ সংস্থার মাধ্যমে তারা পারিবারিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠতে একদিন সক্ষম হবেন।

এ দিকে হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ক্লাসাপাড়া ঘুরে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মনির আহমদের সাথে কথা বলে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, উখিয়ার কৃতিমান পুরুষ শহীদ এ.টি.এম জাফর আলমের নামে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঐ স্কুলের তিনি সভাপতি দাবি করে বলেন, ইউএনএইচসিআর এর অর্থায়নে এনজিও ব্রাক তার স্কুলটিকে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে যা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেও শেষ করা যাবে না। তার একটু আগেই সদ্য প্রতিষ্ঠিত হিলটপ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় উন্নয়নের ভরাডুবি। ইউএনএইচসিআর এর অর্থায়নে এনজিও ব্রাক কোটি টাকা ব্যায়ে ৫ কক্ষ বিশিষ্ট দুটি স্কুল ভবন নির্মাণ করে দিয়েছে। এতে ছাত্রীরা স্বাচ্ছন্দে মনোরম পরিবেশে পাঠদান করতে দেখা গেছে। শিক্ষকেরাও বললেন, স্কুলের দৃশ্যমান উন্নয়ন হওয়ায় ছাত্রী সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কক্সবাজার টেকনাফ সড়ক ঘেঁষে গড়ে উঠা কোর্টবাজার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মনকাড়া দৃশ্যমান উন্নয়ন চিত্র। শিক্ষরা জানান, ইউএনএইচসিআর ও ব্রাকের যৌথ উদ্যোগের এই স্কুলটিকে যথাসাধ্য উন্নয়নের আওতায় আনা হয়েছে। এখানে ৫ কক্ষ পাঠদানের জন্য ও ৩টি কক্ষ ওয়াশব্লক করা হয়েছে যা ছাত্রীদের জন্য অপূরণীয় অবদান বলতে হবে। এনজিওদের এহেন অনুদানে তারা আত্বতৃপ্ত এবং সাংবাদিকদের জানান, এ প্রতিষ্ঠান থেকে যারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন তাদের ও তাদের পিতা মাতার দোয়া থাকবে যারা স্কুলটিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে।

একইভাবে কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে ইউএনএইচসিআর এর অর্থায়নে এনজিও ব্রাক। রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম ডিগলিয়া ও হাজাইম্মা রাস্তার মাথা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে ঘরে ঐ এনজিওদের অনুদানে স্মৃতি স্মারক। সুফলভোগী শফিলা বেগম, বাপ্পি বড়ুয়া, শফিদা বড়ুয়াসহ ১৮/২০জন হতদরিদ্র মহিলা তাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, তাদেরকে প্রায় দেড় বছর আগে গরু কেনার জন্য ২২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে গরু আছে ৪টি, ছাগল আছে ২টি। ঐ টাকায় বর্তমানে তারা চাষাবাদ করে ধান বিক্রি করছে। এছাড়াও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করানো হচ্ছে। বর্তমানে তারা নিজেরাই স্বাবলম্বী বলে দাবি করলেন।

ইউএনএইচসিআর এর প্রোগাম অফিসার সুব্রত কুমার চক্রবর্তী জানান, রোহিঙ্গাদের কারণে যেসব এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তারা কাজ করছে। যেসব এলাকায় রাস্তাঘাট, ব্রীজ কালভার্ট স্কুল কলেজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ঐ সব প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়নের আওতায় আনা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে উখিয়া টেকনাফে প্রায় অর্ধ-শতাধিক স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা উন্নয়ন ও সংস্কারের আওতায় আনা হয়েছে। পরবর্তীতে সমস্ত স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় দৃশ্যমান উন্নয়ন করা হবে। যাতে স্থানীয়রা এনজিওর প্রতি আস্তাবান হয়ে তাদেরকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে।

এ সব উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শনকালে সাথে ছিলেন, ব্রাক কক্সবাজারের প্রোগাম অফিসার মিলন কুমার কর্মকার, কোস্ট ট্রাস্টের কক্সবাজারস্থ পোগ্রাম অফিসার জাহাঙ্গীর আলম, উখিয়া অফিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীসহ ইউএনএইচসিআর, ব্রাক, মুক্তি, কোস্ট ট্রাস্টের বিভিন্ন কর্মকর্তা।

Exit mobile version