parbattanews

রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে আর ভিটো দেবে না চায়না

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেবে না চীন। বরং সংকট নিরসনে সহায়তা দিয়ে যাবে দেশটি। ফলে এ সংকটের একটি কার্যকর সমাধান অচিরেই বেরিয়ে আসবে।

কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ‘ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ’ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এসব কথা বলেন। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ডিকাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি এবং সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমানও বক্তব্য রাখেন।

ডিকাব বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ডিকাব টকের আয়োজন করে থাকে। অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ে আলোকপাতকালে বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যত্র সরিয়ে নেয়া উচিত নয়। কারণ অন্য দেশ থেকে আমদানি ব্যয়বহুল।

চীনের সহায়তায় বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়ায় প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা- জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের মাতারবাড়ীতে জাপান গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে। গভীর সমুদ্রবন্দরের চাহিদা এর মাধ্যমে পূরণ হয়ে যাবে। ফলে নতুন আরেকটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রয়োজন নেই। তবে চীন বঙ্গোপসাগরে বে-টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী বলে জানান তিনি।

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, উহানে প্রথম করোনাভাইরাস নিশ্চিত হলেও তার উৎপত্তিস্থল কোথায় তা বলা যাচ্ছে না। চীন এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে। তিনি পশ্চিমা মিডিয়ার সমালোচনা করে বলেন, ওই সব মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত খবর দেয়া হচ্ছে। ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার সাত দিনের মধ্যে ডব্লিউএইচও’র নজরে আনা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে নতুন ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ছয় মাস পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, বাংলাদেশে কোনো বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। বাংলাদেশে কোনো চীনা নাগরিকও আক্রান্ত হয়নি।

বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার চীনের নাগরিক রয়েছেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এর মধ্যে আট হাজার বিভিন্ন মেগা উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করেন। যারা ছুটিতে গেছেন তাদের এখনই বাংলাদেশে আসা এ দেশের জন্যই নিরাপদ হবে না। তাই প্রকল্পের কাজে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।

চীনে কুনমিংয়েই প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন বলে তিনি জানান। বেইজিং ও সাংহাইয়ে আরও অনেক বাংলাদেশি আছেন। তারা দেশে ফিরে আসতে চাইলে চীন সরকারের কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের এ দেশে ফিরে আসা ঠিক হবে না। এতে তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

করোনাভাইরাসকে মানবজাতির অভিন্ন শত্রু অভিহিত করে তিনি চীনে মাস্কসহ অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশের উদ্যোগ নেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, এসব চালান শিগগিরই জাহাজীকরণ হবে। আমরা সবাই একটা গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দা। সবাইকে মিলিতভাবে এর প্রতিরোধ করতে হবে। বাংলাদেশকেও করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে পাঁচশ’ নতুন কিটস দিয়েছে চীন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছর দুই দেশের মধ্যে ১৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। তার বেশি অবশ্যই চীন থেকে কাঁচামাল, ম্যানুফ্যাকচারিং পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়। তবে আমদানি করা পণ্যের চালানের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা কম।

কারণ জাহাজে পণ্য আসতে যত সময় লাগে ততদিন করোনাভাইরাস বাঁচে না। তবে বাণিজ্যের জন্য লোকজনের যাতায়াত প্রয়োজন হয়, সে কারণে কিছুটা দেরি হতে পারে। তার জন্য বাংলাদেশের অন্য দেশে বাণিজ্য স্থানান্তর করা ঠিক হবে না। অন্য দেশের পণ্য কিনলে ব্যয় বেশি হবে।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীন সহায়তা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই সংকট মিয়ানমারের সংকট। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সে াতের কারণে এ দেশের ওপর তার প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে এটি একটি দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে রূপ নিয়েছে। চীন তা নিরসনে সহায়তা করছে।

দুই বন্ধুর মধ্যে ঝগড়া হলে তৃতীয় বন্ধু তা নিরসনে সহায়তা করে। চীন ঠিক এই কাজটি করছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ে চীনের বন্ধু। আশা করি, শুধু মুখের কথা নয়, সত্যিকার অগ্রগতি হবে।

মিয়ানমারে গণহত্যা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ নিয়ে কাজ করছে আইসিজে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস)। এটা তাই আইসিজের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত হবে। তার প্রতি সম্মান জানাতে হবে। ফলে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

Exit mobile version