parbattanews

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১১

উখিয়া বালুখালীতে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ১১ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গিয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় সাড়ে পাঁচশ আহত এবং ৪০০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছে আইএসসিজি।

মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) বিকালে দেয়া আন্তর্জাতিক সংস্থাটির তথ্য হলো, অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দশ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবার (৪৫,০০০ এরও বেশি ব্যক্তি) বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। প্রায় দশ হাজার আশ্রয়স্থল আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

প্রাথমিক তথ্যমতে, হাসপাতাল, বিতরণ কেন্দ্র, শিখন কেন্দ্র, মহিলা বান্ধব পরিষেবাসহ প্রয়োজনীয় কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গৃহহারা মানুষগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। দগ্ধ হয়ে দুই শিশুসহ এ পর্যন্ত সাতজন রোহিঙ্গা সদস্যের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সকালে তিনি এ কথা জানান।

সোমবার (২২) মার্চ বিকাল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার আগেই আগুন একে একে ৮ নম্বর ওয়েস্ট ৮, ১০ সর্বশেষ ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার, উখিয়া, রামু ও টেকনাফ থেকে সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এসময় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী, পুলিশ, এপিবিএন ও রেড ক্রিসেন্টের টিম এবং স্থানীয়রা যোগ দেন। পরে রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামছুদ্দৌজা নয়ন জানান, আগুনে রোহিঙ্গাদের ১০ হাজারেরও বেশি ঘর পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে বলা হলেও এই সংখ্যা আরও বেশি। এছাড়া আগুনে পুড়ে গেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক। অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লাগোয়া বাংলাদেশি বাসিন্দাদের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমদ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা এখন অনেকটা গৃহহীন। একইভাবে দুই শতাধিক বাংলাদেশি পরিবারের বসতবাড়ি পুড়ে গেছে।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন সকালে জানান, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত দুই শিশুসহ সাতজন রোহিঙ্গা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মৃতদেহগুলো একদম পুড়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর এপিবিএনের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. শিহাব কায়ছার জানান, আগুনে বালুখালীতে অবস্থানরত ৪ নম্বর এপিবিএনের ব্যারাক আংশিক পুড়ে গেছে। তবে অস্ত্র ও মূল্যবান আসবাবপত্র নিরাপদে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আগুনে রোহিঙ্গাদের ঘর ছাড়াও বেশকিছু এনজিও অফিস, স্কুল-মাদ্রাসা পুড়ে গেছে।

আইএসসিজি’র কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ তাফহিম জানান, কুতুপালং বালুখালী এলাকার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সরকারি ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করেছে।

তিনি জানান, ক্যাম্পভিত্তিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তৈরি একটি শিটের হিসাব অনুসারে বালুখালির ক্যাম্প ৮-ইতে ঘরের সংখ্যা ছয় হাজার ২৫০, আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৪৭২ জন। ৮-ডব্লিউ ক্যাম্পে বাড়ি ছয় হাজার ৬১৩টি, আর লোকসংখ্যা ৩০ হাজার ৭৪৩ জন। ক্যাম্প ৯-এ বাড়ি সাত হাজার ২০০টি, আর লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬৩ জন। ক্যাম্প ১০-এ বাড়ি ছয় হাজার ৩২০টি, আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৭০৯ জন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, অগ্নিকাণ্ডে চারটি ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।

উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এখনও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।

Exit mobile version