রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ, অস্ত্র-মাদকের আধিপত্য


কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত ৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অভিযানে গত ১৫ মাসে ৭৭৮ জন আসামি গ্রেপ্তার করেছে, পাশাপাশি ২৮০ মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়াও সাড়ে ১৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে এপিবিএন।
৮ এপিবিএন-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানান। এতে তিনি ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত এই ব্যাটালিয়নের অর্জিত বিভিন্ন সাফল্য তোলে ধরেন।
৮ এপিবিএন বলছে, তারা গত ১৫ মাসে সর্বমোট ২৮০টি বিভিন্ন মামলায় ৭৭৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে অস্ত্র মামলা হয়েছে ১৩টি, আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৮ জন। মাদক মামলা হয়েছে ২২২ টি, আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩২৩ জন। অপহরণ মামলা হয়েছে ৪টি, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭ জন। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে ১০টি, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬ জন। পুলিশ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ১টি, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫ জন। ডাকাতি প্রস্তুতি মামলা হয়েছে ১৬টি, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০৪ জন। মোবাইল কোর্টে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩২ জন। তালিকাভুক্ত দুষ্কৃতকারী গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮৬ জন। বিভিন্ন ঘটনায় রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারী গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরো ৬০ জন। এছাড়া অন্যান্য ১৪ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৩ জন, এজাহারনামীয় আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে ৭৮ জন এবং পলাতক আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬ জন।
এছাড়া বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছে ৮ এপিবিএন। তারা বলছে, গত ১৫ মাসে সর্বমোট ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৯৫ পিস, মার্চে ২ হাজার ২২০ পিস, এপ্রিলে ১ হাজার ৯৪৫ পিস, মে মাসে ৫ হাজার ৪৫৬ পিস, জুনে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৮৬০ পিস, জুলাইয়ে ১৪ হাজার ৮৮৯ পিস, আগস্টে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪১২ পিস, সেপ্টেম্বরে ৩০ হাজার ৩৪৮ পিস, অক্টোবরে ১০ হাজার ৫১০ পিস, নভেম্বরে ৫০ হাজার ১১ পিস, ডিসেম্বরে ১ লাখ ৪২ হাজার ৩৪৬ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ২০২১ সালে মোট ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আবার এ বছরের জানুয়ারিতে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৮৮ পিস, ফেব্রুয়ারিতে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৩ পিস, মার্চে ২ লাখ ১ হাজার ৭৩৪ পিস ও সবশেষ চলতি মাসের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১ লাখ ৭ হাজার ২৭৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ বছর প্রায় ৪ মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ৮ লাখ ১৩ ৪৯০ পিস ইয়াবা।
এর পাশাপাশি ইয়াবার গুঁড়া উদ্ধার করা হয়েছে ৩৬৫ গ্রাম ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে ০৬১ (শল্পশত এককত্রিশ) গ্রাম। ইয়াবা ছাড়াও অন্যান্য মাদকের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৯০ ক্যান বিয়ার ও ১১ লিটার ৩০০ মি.লি. মদ।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনা করে গত ১৫ মাসে বিভিন্ন অস্ত্রও উদ্ধার করেছে ৮ এপিবিএন। তারা বলছে, অভিযানে দেশিয় আগ্নেয়াস্ত্র ১২টি, বিদেশি পিস্তল ১টি, গুলি ৪০ রাউন্ড ও ৪ শটগানের কার্তুজ ৮ রাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশিয় বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ১৯১টি (রাম দা, চাইনিজ কুড়াল, ছোরা, চাকু, তলোয়ার, হাসুয়া, শাবল ইত্যাদি)।
বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও টাকা উদ্ধারের হিসাবও দিয়ে ৮ এপিবিএন বলেন, গত ১৫ মাসে ৯১ ভরি ১৫ আনা ৪ রতি স্বর্ণ, বাংলাদেশি নগদ টাকা ৬৫ লাখ ১৪ হাজার ৭৮০ টাকা, মায়ানমার মুদ্রা ৩ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৫ কিয়াট, বাংলাদেশি জাল নোট ৮১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার এবং মোবাইল কোর্টে পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১০ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৫ টাকা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ নির্মূলে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন এপিবিএন’এর এই কর্মকর্তা।