রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া কেন তিন দেশের রাষ্ট্রদূতের জিজ্ঞাসা

fec-image

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া কেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, কানাডার রাষ্ট্রদূত বেনোয়া প্রেফান্তে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন প্রতিনিধি।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তারা এর কারণ জানতে চান। এ খবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া কেন দেওয়া হচ্ছে, তার কারণ তারা জানতে চেয়েছেন। আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি। তাদের জানিয়েছি—প্রথমে আমরা মনে করেছিলাম মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি দুই-চার মাসের মধ্যেই সামাধান হয়ে যাবে। কিন্তু এখন দেখছি খুব শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হচ্ছে না। এ কারণে ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় এনে প্রধানমন্ত্রী ক্যাম্পগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ক্যাম্পগুলোতে বসবাসের পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্য এবং আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে হত্যা করেছে। একইসঙ্গে তারা ইয়াবার বাহক হিসেবেও কাজ করছে। এছাড়া মিয়ানমার সরকার অভিযোগ করেছে, সে দেশের কিছু সন্ত্রাসী পালিয়ে এসে এসব ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে। এসব বিষয় রোধ করতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আমরা তাদের জানিয়েছি। আমাদের ব্যাখ্যায় তিন দেশের রাষ্ট্রদূত সন্তুষ্ট হয়েছেন।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতরা জানতে চেয়েছেন, ক্যাম্পগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া দিলে এনজিওগুলো রোহিঙ্গাদের সেবায় কাজ করবে কীভাবে? জবাবে তাদের জানিয়েছি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শরণার্থী শিবিরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া থাকে; সেখানে এনজিওকর্মীরা যেভাবে কাজ করেন, এখানেও সেভাবে কাজ করবেন।’

কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতরা কোনও আপত্তি করেছেন কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। এ ব্যাপারে তাদের পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি করা হয়নি।’

বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে কিনা এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।’ বেড়া দেওয়ার কাজ কারা করবে, কীভাবে করবে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রকল্পের মাধ্যমে এ কাজ করলে সময় বেশি লাগবে বলে প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনও উপায়ে এ কাজ করতে বলেছেন। কারা, কীভাবে কাজটি করবে সময় হলে তা জানা যাবে।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘তিন দেশের রাষ্ট্রদূত আরও জানতে চেয়েছেন—রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ কেন বিচ্ছিন্ন করেছি। আমরা জানিয়েছি, ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিস্টরা যেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর ভেতরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহল দিতে যেতে পারে না। তারা মূল সড়কে টহল দেয়। ক্যাম্পগুলোর ভেতরে কে কী করছে, তা রাতে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না বলে আমরা ক্যাম্পের আশপাশে ওয়াচ টাওয়ার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এনজিও কর্মীদের বাংলাদেশের ভিসা দেওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতরা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের জানান, যেসব এনজিওকর্মী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেবা দিতে আসবেন, তাদের ভিসা পেতে কোনও সমস্যা হবে না।
এনজিও কর্মীদের কেউ কেউ রোহিঙ্গাদের উসকানি দিচ্ছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘কেউ রোহিঙ্গাদের উসকানি দিচ্ছেন না। সবাই সহযোগিতা করছেন।’

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আবাসনের সবকিছু প্রস্তুত করা আছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা-ইউএসএইচসিআরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের সেখানে পাঠানো হবে।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন