রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিরোধী উস্কানীদাতা হিসেবে এক এনজিও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই উস্কানিতেই রোহিঙ্গারা মিয়নামারে ফিরতে চাইছে না বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে যাদের রোহিঙ্গাদের দেখাশুনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাই কি তাহলে প্রত্যাবাসন বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত? অভিযোগ পাওয়া গেছে তারাই প্রত্যাবসন বিরোধী কার্যকলাপ থেকে শুরু করে ভয়াবহ অপরাধের সাথে জড়িত।
এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পুটিবনিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের আইওএম’র সহকারি ম্যানেজার হোছাইন বিন মামুনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের সাথে আঁতাত করে আধিপত্য বিস্তার করার গুরুতর অভিযোগ।
পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে এসব দূষ্কৃতকারীদের থেকে এ কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধাসহ ক্যাম্পে নানা সুবিধা গ্রহণের। সেই সাথে রোহিঙ্গাদের সুবিধা দেয়ার জন্য স্থানীয়দের নানাভাবে হয়রানি করারও। এমনকি এক ব্যবসায়ীকে টেকনাফের জাদীমুড়ার আলোচিত হত্যাকাণ্ড যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকের মতো খুন করার হুমকি নাকি দেয় ওই কর্মকর্তা! এ বিষয়ে টেকনাফ থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশের কারণে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে অবাধে বিচরণের উপর নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুটিবনিয়া ২২ নং ক্যাম্পে স্থানীয় কতিপয় ব্যবসায়ী ক্যাম্প ইনচার্জের অনুমতিক্রমে বিভিন্ন ধরণের পণ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ করছে।
এতে বেশকিছু রোহিঙ্গা নেতা নাখোশ হয়ে উঠে। সম্প্রতি পুটিবনিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে (২২ নং ক্যাম্প) স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ক্রয় বিক্রয় করবেনা মর্মে তাদের (রোহিঙ্গাদের) ছোট ছোট সকল ধরণের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়।
গত ৮,৯ ও ১০ নভেম্বর তিন দিন ধরে দোকানপাট বন্ধ ছিল। রোহিঙ্গাদের দাবি তারা ক্যাম্প থেকে কোন পণ্য ক্রয় করবেনা। বাজারে গিয়ে স্থানীয়দের মতো ক্রয় করে ক্যাম্পে বিক্রি করবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন, কমল বড়ুয়া, সিরাজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন পাইকারী ব্যবসায়ীদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যবসা না করার জন্যে স্পষ্ট বলে দেয় ওই মামুন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা অব্যাহত রাখলে গত ৯ নভেম্বর দুপুরের দিকে ক্যাম্প সংলগ্ন রইক্ষ্যং বাজারে ব্যবাসয়ী ও বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিনকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
হেলাল উদ্দিনের ভাষ্যমতে টেকনাফে ওমর ফারুকের মতো পরিণতি হবে বলে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তাকে। যে কোনো সময় তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেন আইওএমের ওই কর্মকর্তা মামুন।
এই ব্যবসায়ী নিরাপত্তহীন হয়ে টেকনাফ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যার নং ২০২১ তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৯ ইং। অভিযোগে জানা যায়, রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পর ওই ব্যবাসায়ীদের জমিজামা প্রদান করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় পুটিবনিয়া এলাকাবাসী। সে সুবাধে ক্যাম্পে অল্পস্বল্প বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের ব্যবাসায় পরিচালনা করলে বাধা হয়ে দাড়ায় ওই মামুন।
এরপরেও ব্যবসা পরিচালনা করলে ৯ নভেম্বর রইক্ষ্যং বাজারে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা দ্বারা দিবালোকে হত্যার হুমকি দেয়া হয় তাকে। একইভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে অশালীন গালমন্দ করা হয় মামুনের চাচা মীর কাশেমকে।
তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা মূলত ক্যাম্প থেকে বের হতে পারলে ইয়াবা থেকে শুরু করে ভয়াবহ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়বে। তারা ক্যম্প থেকে কেনাবেচা না করে বাহিরে গিয়ে কেনাবেচার একমাত্র কারণ অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করা।
গত ২৮ অক্টোবর ইনানীতে ৮ লাখ ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা নেতা জামাল উদ্দিন আটক করে র্যাব। এই জামাল উদ্দিন উনচিপ্রাং পুটিবনিয়া ক্যাম্পের মাঝি ছিলো। তার সহযোগিরা এখনো এই ক্যাম্পে বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাদের সাথে মামুনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানান তারা।
ক্যাম্পে নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থারা জানান, আইওএমের অফিসের মামুন ক্যাম্পে বেশ বেপরোয়া ও রহস্যজনক চলাফেরা করে। রোহিঙ্গাদের সাথে তার গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। যার কারণে রোহিঙ্গারা স্ব দেশে ফিরতে নারাজ। তাকে নজরদারী করা হচ্ছে বলেও জানান তারা।
এ ব্যাপারে হোছাইন বিন মামুন বলেন, এ ব্যপারে তিনি কিছুই জানেননা। তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন।
অভিযোগের তদন্তপ্রাপ্ত ও হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ীর ইনচার্জ এসআই মশিউর রহমান অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ক্যাম্পে পুলিশের ইনচার্জ এসআই নাজমুল হোসেন জানান, বিষয়টি নজরে এসেছে। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।