parbattanews

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিকাশের আড়ালে চলছে হুন্ডি বাণিজ্য

ঘুমধুম প্রতিনিধি:

সরকার জনস্বার্থে উপজেলা ভিত্তিক বিকাশ নামের টাকা লেনদেনের এজেন্ট প্রথা চালু করলেও বর্তমানে তা হিতে বিপরীত হয়েছে। মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা এদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে বিকাশ ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেড়েছে আশঙ্কাজনক ভাবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক হুন্ডি ও বিকাশ এজেন্ট। যে সব এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসির টাকাসহ ইয়াবা বিক্রির টাকা লেনদেন করা হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রায়াত্ম ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান গুলোতে রেমিটেন্স কমে গেছে উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন বিকাশ ও হুন্ডি ব্যবসা সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে। তাই এসব ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিক্তিক সবচেয়ে বেশি বিকাশ ভিত্তিক হুন্ডি ব্যবসা চালাই ৮ বিকাশ এজেন্ট। তাদের প্রতিদিনের লেনদেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। বিকাশের এজেন্ট সিম ছাড়াও তাদের রয়েছে নামে বেনামে অর্ধশত ব্যক্তিগত বিকাশ সিম। এসব সিম থেকে প্রতিদিন লেনদেন করা হচ্ছে দোকান ছাড়াও বাড়ি বাড়ি গিয়ে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় যাদের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন কুতুপালং বাজারের মৌলভী ছৈয়দুল আমিন, রফিক, বশর, আলী, বালুখালী পানবাজারের জাহাঙ্গীর, পালংখালী বাজারের সোহেল, থাইনখালী বাজারের মানিক, বশর ও এন ইসলাম প্রমুখ।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৫ আগস্টের আগে এ উপজেলায় ৬/৭টি বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করতে দেখা গেছে। তাও খুব সীমিত আকারে। বর্তমানে ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার হতে পালিয়ে আসা প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়ার ৮টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এসব ক্যাম্প গুলোতে তল্লাশী চালালে দেখা যাবে প্রায় শতাধিক হুন্ডি ও বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে অতর্কিত ভাবে কুতুপালং ক্যাম্প বাজারে অভ্যান্তরে একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ৭/৮জন লোক ভীড় করছে। একজন রোহিঙ্গা ১লক্ষ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। এ টাকা কোথা থেকে এসেছে জানতে চাওয়া হলে কুতুপালং বি ব্লকের বাসিন্দা নুরুল্লাহ (৪৫) জানায়, তার ২ ছেলে নুরুল ইসলাম, আলী আকবর দীর্ঘদিন যাবৎ মালয়েশিয়া অবস্থান করছে। তারা এসব টাকা পাঠিয়েছে।

এসময় বিকাশ এজেন্ট রোহিঙ্গা নাগরিক ছৈয়দ আমিন অস্বীকার করে বলেন ওই টাকা তার কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। অন্যান্য রোহিঙ্গারা সরে পড়তে দেখে বিকাশ এজেন্ট হতভম্ব হয়ে পড়ে। পরে স্বীকার করে বলেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লোকজনকে টাকা দিয়ে বিকাশ ও হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রায় শতাধিক বিকাশ ও হুন্ডি ব্যবসায়ী উখিয়ার বিভিন্ন শরনার্থী ক্যাম্পে প্রকাশ্যে দোকান খোলে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করলেও দেখার কেউ নেই। তবে রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুর জানান, বিদেশ থেকে সমস্ত টাকা বিকাশ ও হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে।

গত ২৯ আগস্ট টেকনাফ মডেল থানা মানি লন্ডারি প্রতিরোধ আইন/২০১২(সংশোধনী ২০১৫) এর ৪ (২) দায়েরকৃত মামলার আসামি নুরুল হক ওরফে ভুট্টো(৩২) কে জিজ্ঞাসাবাদকালে বলেন, তার সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসার টাকা লেনদেন করতো স্বপন নামের এক বিকাশ এজেন্ট।

তিনি আরো বলেন, বাহকদের মাধ্যমে আটক মোহাম্মদ আফজল হোসেন ইমন মাদক বিক্রয়ের টাকা তার ছেলে সালাউদ্দিনের মাধ্যমে বিকাশ এজেন্ট স্বপনের নিকট পাঠাতো। স্বপন তার বিকাশ একাউন্ট থেকে টেকনাফের বিকাশ একাউন্টে সে নিয়মিত টাকা পাঠালে নুরুল হক ওরফে ভুট্টো ওই টাকা উত্তোলন করতো। সে সিআইডির নিকট আরো স্বীকার করেছে এ পর্যন্ত ১০লাখ ৩০হাজার ২০ টাকা ওই বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়েছে।

এভাবে উখিয়াতেও বেশ কয়েকজন চিহ্নিত এজেন্ট আর্কষনীয় সাইনবোর্ড ও বিলাশ বহুল দোকান দিয়ে নাম মাত্র কয়েকটি মোবাইল রেখে ইয়াবার টাকা লেনদেন করছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেন ওই বিকাশ এজেন্টদের আটক করা হলে উখিয়ার সমস্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ প্রতি মাসে কত পরিমাণ ইয়াবা টাকা লেনদেন হচ্ছে তা বেরিয়ে আসবে।

Exit mobile version