parbattanews

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ

টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকাগুলোতে পাল্লা দিয়ে ডেঙ্গু রোগী আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে হলে অতীতের সব রেকর্ড ছড়িয়ে যাবে। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক হাসপাতাল গুলোতে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসকের স্বরণাপন্ন হচ্ছেন। এতে টেস্ট দিলেই ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়ছে। ডেঙ্গু প্রকোপ আআশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেলেও সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে ৮’শত ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছিল। চলতি আগস্ট মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত ৩৪৭ জন রোগী সনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত জুলাই মাসে প্রায় ৬’শত জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে তারা চিকিৎসামুখী কম হওয়ায় শনাক্ত হচ্ছে কম।

সরেজমিন দেখা যায়, টেকনাফ উপজেলার শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২৬ ও জাদিমুড়া ২৭ নং ক্যাম্পের ঞউঐ (ঞবৎৎব ফবং যড়সসবং) হাসপাতাল ও পল্লি চিকিৎসক এর ফার্মেসিগুলোতে দীর্ঘ রোগীর লাইন। তারা বেশির ভাগ জ্বরে আক্রান্ত। শিশু, যুবক, বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে যারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন টেস্ট দিলেই তাদের অনেকে ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়েছে।

শালবাগান ক্যাম্পের মো. সেলিম নামে এক রোহিঙ্গা যুবক জানান, দীর্ঘ দিন ধরে জ্বর। হাসপাতালে গেলে নাপা ট্যাবলেট ধরিয়ে দেয়। কোনভাবেই সেই ঔষধ খেয়ে জ্বর যায়না। তাই, পল্লী চিকিৎসক এর কাছে আসা।

এনজিওতে কর্মরত মোছনী গ্রামের মো. সিরাজ বলেন, শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক। সারা শরীর অসহ্য ব্যাথা। টেস্টে ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়েছে। বর্তমানে ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শালবাগান ক্যাম্প সংলগ্ন নয়াপাড়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন চৌধুরীসহ পরিবারের সাতজন ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন জ্বরে আক্রান্ত। শুধু ওই পরিবার ও গ্রামেই নই। ক্যাম্প সংলগ্ন দমদমিয়া, জাদিমুরা, মোছনী, আলীখালী গ্রামের প্রায় ঘরেই জ্বরের রোগী। যারা টেস্ট করাচ্ছেন ডেঙ্গু পজিটিভ হচ্ছেন। তারা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

আক্রান্তদের মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে এনজিওতে কর্মরত নারী-পুরুষও রয়েছে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে বেশীর ভাগই আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাছাড়া অবস্থান ও পরিবেশগত কারণে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘিঞ্জি পরিবেশে অবস্থিত। প্রতিটি ঘরে ৭ থেকে ১০ জন সদস্য গাদাগাদি অবস্থায় বসবাস করে থাকে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে সচেতনতারও অভাব লক্ষ্য করা গেছে। তাদের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় স্থানীয়রাও ভুগছেন এ রোগে। ছড়িয়ে পড়েছে টেকনাফ উপজেলার গ্রামাঞ্চলে। এ বিষয়ে মোছনী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২৬ নং ক্যাম্পের TDH (Terre des hommes) হাসপাতালের মেডিকেল ডেটা অফিসার বিকাশ শীলের কাছে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য চাইলে তিনি তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এদিকে টেকনাফে এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত সপ্তাহে এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে অনেকে চিকিৎসাধীন।এছাড়াও নিউমোনিয়া, সর্দি জ্বরে আক্রান্ত রোগির সংখ্যাও কম নেই। কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এমন ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নীলা ইউপির ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী এলাকা হওয়ায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগ। এখনো সংশ্লিষ্ট কেউ সচেতনমূলক প্রচারণা ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেয়া যায়নি। তিনি দ্রুত এ বিষয়ে সচেতনতামূলক সভা ও লিফলেট বিতরণে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল বলেন, গত জুলাই মাসে ৮’শত ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছিল। চলতি মাসে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪৭ জন রোগী সনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে মাইকিং, লিফলেট সহ নানা উদ্বুুুদ্ধমূলক প্রচারণা চলছে। সেই সাথে রোহিঙ্গা শিবিরেও পাল্লা দিয়ে চলছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত মাসে তাদের প্রায় ৬০০ ডেঙ্গ রোগী সনাক্ত হয়েছে। তবে তারা চিকিৎসামুখী কম হওয়া শনাক্ত হচ্ছে কম। টেকনাফ পৌরসভাকে এবিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

Exit mobile version