parbattanews

রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে ‘জাতিগত নিধন’ বলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় রাশিয়া

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে রাশিয়া। মিয়ানমারে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত নিকোলায় লিস্তপাদোভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্য এ সমস্যার সমাধানে সহায়ক নয়। এটা বরং পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বুধবার যক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে অভিহিত করে। পরদিন নিকোলায় লিস্তপাদোভ রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার মনে হয় না, এটা সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে। উল্টো এটি পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

এ মাসেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারকে সামরিক বাহিনীর ব্যবহার কমানোর নিশ্চয়তা দেওয়ার আহ্বান জানাতে সম্মত হয় রাশিয়া ও চীন। একইসঙ্গে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশেও একমত হয়। তবে দেশটির বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ বা চাপ প্রয়োগের বিরোধিতা করে চীন-রাশিয়া।

লিস্তপাদোভ বলেন, আমরা অতিমাত্রায় বাইরের হস্তক্ষেপের বিপক্ষে। কারণ এটা কোনও গঠনমূলক ফল নিয়ে আসবে না। শুধু চাপ প্রয়োগ, দোষারোপ আর অভিযোগ কোনও কাজেই আসবে না।

গত সপ্তাহেই মিয়ানমার সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। সফরে তিনি দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি এবং সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ সিনিয়র সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং’র সঙ্গে আমি আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমারের সফল গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গা নির্যাতনের ব্যাপারে একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান।

সফর শেষে বুধবার এক বিবৃতিতে রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন রেক্স টিলারসন। বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে শরণার্থী হয়েছে। এটা জাতিগত নিধনযজ্ঞ। ট্রাম্প প্রশাসন এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের মার্কিন আইনের আওতায় জবাবদিহিতার ওপর জোর দিচ্ছে। এছাড়া সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র কর্মকর্তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জোরালো নিষেধাজ্ঞার কথা বললেও টিলারসনের মতে, দেশটির গণতন্ত্র এখনও নবজাতক পর্যায়ে রয়েছে।

রেক্স টিলারসন বলেন, রাখাইন সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাখাইনে বিপুল সংখ্যক মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে এই দুর্ভোগ থেকে তাদের পরিত্রাণ দেওয়া। উদ্ভূত ভয়াবহ পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে আমি রাখাইনের সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অতিরিক্ত ৪৭ মিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছি। গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র মোট ৮৭ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ওই বিবৃতির পরদিন বৃহস্পতিবারই এর কঠোর সমালোচনা করেন মিয়ানমারে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, মিয়ানমারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত স্বাধীন তদন্তের বিষয়টি অবান্তর।

রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমারের জন্য এটা কোনও অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা কখনোই এটি গ্রহণ করবে না। এটা অকার্যকর।

তিনি বলেন, স্বাধীন তদন্ত মানে হচ্ছে আন্তর্জাতিক তদন্ত। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, এ বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পর রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করে মিয়ানমার। এ অভিযানের পর ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞের অভিযোগ এনেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, রোহিঙ্গারা মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনার মুখে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দুই প্রভাবশালী সদস্য চীন ও রাশিয়া।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Exit mobile version