রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঘিরে প্রশাসনের তৎপরতা; কৌশলে এগুচ্ছে সংশ্লিষ্টরা

fec-image

দীর্ঘ ২ বছর পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঘিরে প্রশাসনের অভ্যান্তরে শুরু হয়েছে তৎপরতা। ঈদের আমেজ কাটতে না কাটতে প্রশাসনের লোকজনকে প্রত্যাবাসন বিষয়ে সক্রিয় হতে দেখা গেছে। তবে এবার প্রত্যাবাসনের কিছুটা ইতিবাচক দিক পরিলক্ষিত করা গেছে। রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপার তারা নমনীয় হয়ে এসেছে। এছাড়াও নিজ মাতৃভূমিতে ফিরতে অধির আগ্রহে আছে বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার। তাদেরকে সঠিক ভাবে তদারকি করা হলে প্রত্যাবাসন সফল হবে বলে মনে করছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

আগামী ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কথা হয় উখিয়ার ময়নারঘোনা ক্যাম্পের মাষ্টার নুরুল কবিরের সাথে। তিনি বলেন, আমার নিকটাত্নীয় রয়েছে টেকনাফের শালবন ক্যাম্পে। যারা ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের তালিকাভূক্ত। তাদের একটি দাবি মিয়ানমার সরকার যদি এখনো ঘোষণা দেয়, তাদের দাবি-দাওয়া গুলো মেনে নেবে, তাহলে অবশ্যই আমরা মিয়ানমারে ফেরত যাব।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আসিয়ানের নেতৃবৃন্দরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে গেছেন। এ সময় আমাদের পক্ষ থেকে মাত্র ৩টি দাবি উত্থাপন করা হয়। যদিওবা আগে থেকে আমরা ৭টি দাবি দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু এবার তা কমিয়ে ৩টি দাবি দেওয়া হয়। তৎমধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের বাড়ি ঘর, জায়গা-জমি ফেরত দিতে হবে। এ সময় মিয়ানমার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আসিয়ানের প্রতিনিধিরা এই দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন। আগামী ২ মাস পর আবার বাংলাদেশে আসবেন বলে আমাদেরকে কথা দেন তারা। এতে রোহিঙ্গারা আশান্বিত হয় মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু হঠাৎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তারিখ ঠিক হওয়ায় আলোচনাটি ধামাচাপা পড়ে গেছে বলে সে জানায়।

এদিকে নুরুল বশর নামের এক রোহিঙ্গা নেতা জানায়, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে আশ্রয় দিয়ে যেভাবে নিজের ছেলের মত করে লালন-পালন করেছে তার জন্য রোহিঙ্গারা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে এবং দোয়া করবে। তবে এটি আমাদের মাতৃভূমি নয়, সুতরাং এখানে বেশি দিন থাকতে পারবনা। তাই দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাই আমরা। কিন্তু আমাদের কিছু দাবি-দাওয়া ছিল তা যদি মিয়ানমার সরকার মেনে নেয়, তাহলে কোন প্রকার দিন-তারিখ ছাড়া একদিনের মধ্যে সমস্ত রোহিঙ্গা চলে যাবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে রবিবার (১৮ আগস্ট) কক্সবাজারে এক জরুরি বৈঠক করেছেন টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরা। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক শেষে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল আলম নেজামী বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। তবে তারা কৌশলে এগোচ্ছে বলেও সুত্রে জানায়।

তিনি বলেন, ‘আগামী ২২ আগস্টের প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছি। এখন শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো এ কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে।’ বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, অতিরিক্ত আরআরআরসি শামসুদ্দৌজা নয়ন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম সরওয়ার কামালসহ সেনাবাহিনী ও ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধিরা।

উল্লেখ্য, এর আগে রোহিঙ্গাদের প্রতিবাদে গত বছরের ১৫ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। সে সময় উখিয়ার ঘুমধুম ও টেকনাফের টেকনাফ নাফ নদীর তীরে কেরণতলী (নয়াপাড়া) প্রত্যাবাসন ঘাট নির্মাণ করা হয়। সেখানে ১৬ আনসার ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার, রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন