parbattanews

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কেমন কাটে রাতের জীবন

রাতের বেলা কুতুপালং শিবিরে একটি নাপিতের দোকান

দিনের আলোতে আমরা মানুষের স্বভাব আর বেঁচে থাকা যেমন দেখি রাতের আঁধারে তার পরিবর্তন আর কয়জনে তালাশ করি।ঠিক তেমনি করে রাতের বেলা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন কেমন কাটে তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর রাতের বেলা শরণার্থী শিবিরে থাকার অনুমতি নেই। রাখাইন রাজ্যের চেয়ে শিবিরে রাতের জীবন অনেক আলাদা। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু বেশিরভাগ ঘুমাতে পারে না ভবিষ্যতের চিন্তায় ও ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায়।

তবে রাতের সময়টিই রোহিঙ্গাদের জন্য সামাজিক মেলবন্ধনের সময়। তখন সবাই একসঙ্গে বসে আমারা দিনের বেলা কে কি করেছি সেগুলো নিয়ে কথা বলি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কারণে দুর্ভোগ ও আমাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা নিয়ে মতবিনিময় করি।

বাংলাদেশের শিবিরে এখন দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করছে। রাতে এখানে দোকান খোলা থাকে। সোলারের আলোয় আলোকিত দোকানের সামনে রোহিঙ্গা লোকজন জড় হয়। পান বা কোমল পানীয় বিক্রির দোকানগুলো সোলারের আলোতে বেশ দৃষ্টিনন্দন রূপ ধারণ করে।

শরণার্থীরা ঘড়ি বা সময় দেখে না। দিন থেকে রাত হয়। দিনের পর দিন বহু রোহিঙ্গা চাঁদ-সূর্য-তারা দেখে সময় গুনছেন।

আমিও এক রোহিঙ্গা, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বুথিডং টাউনশিপের বাসিন্দা। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার বাহিনীর নৃশংস অভিযান থেকে বাঁচতে আরো অনেকের সঙ্গে আমিও পালিয়ে আসি। বহু রোহিঙ্গাকে তখন হত্যা করা হয়। শরনার্থী শিবিরে আসার পর আমি ইউটিউব দেখে দেখে ফটোগ্রাফির প্রশিক্ষণ নেই। ইন্সটাগ্রাম ও ফেসবুক থেকেও সাহায্য নিয়েছি।

প্রথমে মোবাইল ফোন দিয়ে আমি ছবি তোলা শুরু করি। পরে সত্যিকারের ক্যামেরায় হাত দেই। এখন বাংলাদেশে আমরা রোহিঙ্গারা কিছুটা নিরাপদ বোধ করছি। আমরা শিল্পী হচ্ছি, কবি, গায়ক ও ফটোগ্রাফার হচ্ছি। আমি ফটোগ্রাফার হয়েছি এবং আমার জাতিকে তুলে ধরার জন্য আমার এই দক্ষতাকে আমি কাজে লাগাচ্ছি।

দিনের আলোতে রোহিঙ্গাদের সবসময় দেখতে পায়না বিশ্ব। আমরা নিরাপত্তার কারণে ও অধিকার ফিরে না পাওয়ায় এখনো মিয়ানমার ফিরতে পারছি না। তবে আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা দায়েরের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এদিকে মনযোগ দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন থেকে রক্ষায় ‘অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থার’ রায় দেয়া হয়েছে। এই অন্ধকার সময়ে আমার জাতির জন্য আইসিজে একটি আলোক রেখা।

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর

Exit mobile version