রোহিঙ্গা শিবিরে ১৮ মাসে বন্যহাতি আক্রমণের ৯৩ ঘটনা ঘটেছে

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির ও আশপাশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর গ্রামগুলোতে গত ১৮ মাসে বন্যহাতির আক্রমণের ৯৩টি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হাতির সঙ্গে শরণার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এমনকি ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে হাতি প্রবেশ করার চেষ্টা করলেও হাতিগুলোকে শান্তিপূর্ণভাবে বনে ফেরত পাঠানো সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)।

অথচ এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর ছয়মাসে রোহিঙ্গা শিবিরে বন্যহাতির আক্রমণে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) যৌথভাবে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী বসতি স্থাপনা কুতুপালংয়ে বসবাসরত শরণার্থী ও আশেপাশে বসবাসকারী স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে হাতির সংঘর্ষ হওয়ার ঘটনা কমাতে ১৮ মাস আগে শুরু করা একটি প্রকল্প বেশ সাফল্য পেয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের আসার কয়েক মাস পর থেকে শরণার্থী শিবিরে হাতির আক্রমণে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই শরণার্থী শিবিরের অবস্থান এক সময় হাতি চলাচলের প্রধান রাস্তায় ছিল।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, শরণার্থী শিবিরে হাতির প্রবেশরোধ করার পাশাপাশি স্থানীয় বাংলাদেশি জনগণকেও সুরক্ষা দিতে এ দুটি সংস্থার মাধ্যমে শুরু হওয়া প্রকল্পে ৫৮৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর সমন্বয়ে ৪৮টি ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবীর এ দলটি এখন পর্যন্ত ৯৩টি ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে সমর্থ হয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে হাতি প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু তাদেরকে বনে ফেরত পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এসব স্বেচ্ছাসেবীরা রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর লোকজনকে হাতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রয়োজনীয়তা এবং তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণের উপায়গুলো তুলে ধরে সচেতনতা এবং শিক্ষামূলক প্রচারণায় অংশ নিয়েছে।

প্রশিক্ষিত এ এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা নতুন করে নির্মিত ৯৪টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে হাতির চলাচল পর্যবেক্ষণ করে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে শরণার্থী শিবিরের ভেতরে হতাহতের ঘটনা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।

ইউএনএইচসিআর কক্সবাজারের অপারেশন্স প্রধান ও উপ-কার্যালয়ের প্রধান মারিন ডিন কাজদমকাচ বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশদারিত্ব, যা ভালো ফল দিয়েছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শরণার্থীদের সুরক্ষা দিচ্ছি, কিন্তু পাশাপাশি মারাত্মকভাবে বিপন্ন বন্যহাতির সংরক্ষণও নিশ্চিত করছি। ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ সরকার এবং সহযোগী সংগঠনগুলোকে সাঙ্গে নিয়ে টেকসই সংরক্ষণ এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

বিশ্ব হাতি দিবস-১৯ উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সংস্থা দুটি কক্সবাজারের একটি হোটেলের হল রুমে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার।

অনুষ্ঠানে আইইউসিএন’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রাকিবুল আমিন বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা জনগণের সুরক্ষার জন্য ইউএনএইচসিআর’র সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবো এবং হাতিদের রক্ষার জন্য সেরা সংরক্ষণ বিজ্ঞান আনবো’।

তিনি হাতিদের রক্ষা করতে এবং শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগণ উভয় সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে মানব-হাতির দ্বন্দ্ব হ্রাস করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিস্তৃত বনভূমি সংরক্ষণের পদ্ধতির বিকাশে সহায়তা করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রকে একত্রিত করার উপর জোর দেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপের সমন্বয়ক টড ওফচুক, বাংলাদেশ বন বিভাগ (বিএফডি) চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহাম্মদ ইয়াসিন এবং বাংলাদেশের এশিয়ান এলিফ্যান্ট বিশেষজ্ঞ গ্রুপের সদস্য এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউএনএইচসিআর, জাতিসংঘ, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন