নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:
বার্মার সেনা বাহিনী নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৯জন এইডস রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ১০ হাজারের বেশি ডায়রিয়া এবং কলেরা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এইডস নিয়ে অসচেতনতার কারণে এসব রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কক্সবাজারের স্বাস্থ্য বিভাগের
গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশমুখী যে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয়েছে, এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অবস্থান এখন কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় এবং বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায়। মানবিক কারণে বাংলাদেশ সরকার এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় শঙ্কিত কক্সবাজারের স্বাস্থ্য বিভাগ। গত কয়েক দিনে এখানে মোট ১৯জন এইডস রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুস সালাম বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত ১৯জনের শরীরে এইচ আই ভি ভাইরাস পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হলেও ১৮জনের চিকিৎসা চলছে।
আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন এনজিও’র সমন্বয়ে রোহিঙ্গাদের রক্ত পরীক্ষার পর এর প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। এর বাইরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এইডস রোগে আক্রান্ত ২জন চিকিৎসাধিন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এইডস ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের অবস্থান অনেক ওপরে। দেশটিতে দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি এইডস রোগী রয়েছে। এইডস আক্রান্তদের দ্রুত চিহ্নিত করা না গেলে বাংলাদেশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চিকিৎসকরা জানান, সেক্স, রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া, মুখের লালার কারণে এইডস রোগটি ছড়িয়ে পড়বে। সেজন্য আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। যারা আক্রান্ত তাদেরকে চিহ্নিত করে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।
এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে পরিপূর্ণভাবে পানীয় জল এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বাড়ছে ডায়রিয়া ও কলেরা রোগীর সংখ্যা।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম বলেন, রোহিঙ্গাদের মলমূত্র বৃষ্টির পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় তারা ডায়রিয়া, কলেরাসহ নানা রকম পানি বাহিত রোগের বিস্তার ঘটছে।
উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাত হাজার টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা ক্যাম্পও রয়েছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডায়রিয়া, কলেরা এবং এইডস রোগীর বাইরে গত ৪০ দিনে এখানে ২৪ হাজার রোগীর জ্বর ও নিউমোনিয়া, ৬ হাজার চর্মরোগী, ১৪জন ম্যালেরিয়া রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।