parbattanews

‘রোয়াংছড়ির সবচেয়ে শিক্ষিত গ্রাম অংজাই পাড়া’

বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার অন্যতম দুর্গম ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রাম অংজাই পাড়া। এই অংজাই পাড়া থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ৭ জন। যাদের সবাই কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছে। সবার রেজাল্টও হয়েছে আশানুরূপ। কেউ ফেল করেনি এটাই গ্রামবাসীর জন্য সুসংবাদ।

উত্তীর্ণদের মধ্যে ৩ জনের ফলাফল ৪.৪৪ অধিক, বাকিদের ৩.০০ ওপরে। তন্মধ্যে মাসানুর ফলাফল সর্বোচ্চ ৪.৯৩। উসাইওয়াং এর ফলাফল ৪.৫৭, প্রুশের ৪.৪৪ ও অংমানুর পয়েন্ট ৩.৫০…ইত্যাদি। ৮৩টি পরিবারের ছোট্ট এই গ্রাম থেকে তারা এযাবতকালে সর্বোচ্চ সংখ্যক এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। যদিও তারা সবাই খেত-খামারী, কৃষক, জুম চাষীর সন্তান। অনেক শিক্ষার্থী পরিবারে বাবা-মার সাথে জুমে কাজ করতো, ৭ মাইল পায়ে হেটে বিদ্যালয়ে যেতো। বই (গাইডবই) ছাড়া অনাথ আশ্রম, বিহার ক্যাং এ থেকে পড়াশোনা করেছে।

গ্রামের অধিকাংশ পিতামাতা সন্তানদের পড়াশোনা ব্যাপারে একটু উদাসীন। অনেক পিতামাতাকে যুব ফোরাম বুঝাত সন্তানদের পড়াশোনা করাতে। উপরন্তু না পেয়ে তারা নিজ উদ্যোগে শিক্ষা সেমিনাররে আয়োজন করিয়েছে, পরিবারকে বুঝিয়েছে, সাহস-শক্তি জুগিয়েছে। এখন দেখা যায় পাড়ার অধিকাংশ পিতামাতা নিরক্ষর হলেও তারা এটা জানে এবং গর্ব করে বলেও যে “রোয়াংছড়ি উপজেলার সবচেয়ে শিক্ষায় শিক্ষিত গ্রাম হচ্ছে এই অংজাই পাড়া।” ইদানীং শিক্ষিত সুশীল সমাজের মুখেও শোনা যায়। এবছর মাস্টার্স পাশ করে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করেছে ৩ জন। বিএ অনার্স (জাবি, ঢাবি, চট্টগ্রাম কলেজ, বান্দরবান সরকারি কলেজ থেকে ) সম্পন্ন করেছে ৫ জন।

শিক্ষার এই আন্দোলনটা শুরু করেছিলেন শ্রদ্ধেয় উক্যনু (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) আকো উনার হাত ধরেই। তারই হাত ধরে, তারই অনুপ্রেরণায় পরবর্তীতে বুয়েট, ঢাবি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মত স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ন্যাশনালেও অনেকজন পড়াশোনা করছে । অনেকজন ভালো রেজাল্ট থাকা সত্ত্বেও টাকার অভাবে বিগত বছরে অনেকে পাবলিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এ গ্রামের অধিকাংশ অবিভাবক আগের তুলনা বহুগুণ সচেতন বলা যায়। তারা না খেয়ে, না পরে হলেও সন্তানদের পড়াশোনা করাবেই।

তবে একটি বিষয়ে খুব না বললেই নয়, যারা এবার এসএসসি পাস করেছে তাদের পিতামাতা সবাই জুম চাষি ও কৃষক। জানিনা উনারা কত কষ্ট করে, নিজে না খেয়ে না পরে সন্তানদের পড়িয়েছেন। এখন আবার চিন্তা ছেলেমেয়েরা নতুন কলেজে যাবে। কোথায় যাবে, কোথায় পড়বে, খরচ কি হবে এসব নিয়েও তাদের চিন্তায় ঘুম হারাম। একপ্রকার ভাগ্যকে আলিঙ্গন করেই সেটি কতদূর এগোতে পারবে সেটিই বাবা মা’দের কাছে প্রশ্ন ।

যুব ফোরামের এক কর্মী আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ভালো খবর হচ্ছে বান্দরবান জেলায় প্রতিটা উপজেলায় কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। এবারও রোয়াংছড়ি কলেজ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগে সিংয়ইংপ্রু নামে এক মেয়ে চান্স পেয়েছে। তাই আমিও বলব তোমরা হতাশ হয়োনা। তোমরা যা করেছো অনেক ভালোই করেছে। আমরা অনেক খুশি, খুশি তোমার বাবা-মা-পরিবার ও পাড়াবাসীও। আশাকরি তোমাদের একটু একটু স্বপ্ন একদিন বড় পর্যায়ে নিয়ে যাবে। সেদিনের অপেক্ষায় থাকলাম । সবাইকে অভিনন্দন। তোমাদের জন্য শুভ কামনা। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে সবসময়ই তোমাদের পাশে থাকার। সবাইকে পিত্থি মোইট্টা, আশীর্বাদ ও দোয়া। ভালো থেকো।

Exit mobile version