লংগদুতে অস্ত্রের ঝনঝনানি, আতঙ্কিত সাধারণ বসবাসকারী

fec-image

বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তপ্ত পাহাড়। বিশেষ করে সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটির লংগদু এলাকায় এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যুবলীগ নেতা নূরুল ইসলাম নয়নকে হত্যার পর পাল্টে গেছে লংগদুর চিত্র। রাত হলেই বাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি। সাধারণ বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাহাড়কে শান্ত রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি লংগদু এলাকায় সরেজমিন ঘুরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি ও আতঙ্কিত মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে।

লংগদুর কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। কখন পাহাড়ি আর বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত বেধে যায়, তা নিয়ে চিন্তিত তারা। অবশ্য সেনাবাহিনীর মোবাইল টিম, পুলিশের কয়েকটি ক্যাম্পসহ বিজিবির সদস্যরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতেও দেখা গেছে। অপরিচিত কেউ গেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার পরই তাকে যেতে দেওয়া হয়। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অপরিচিতজনদের যথাস্থানে পৌঁছে দিতে সহায়তা করছেন।

স্থানীয় সাধারণ বাঙালি ও পাহাড়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ি সংগঠন জনসংহতির মধ্যেই এখন মতবিরোধ চলছে। শান্তি চুক্তির পরই এ বিরোধের সৃষ্টি হয়। জনসংহতি সমিতি ভেঙে সৃষ্টি হয় নতুন গ্রুপ। এদের মধ্যে একটি সশস্ত্র গ্রুপও কাজ করছে। যার নাম জনসংহতি সমিতি সংস্কার। এর পাশাপাশি ইউপিডিএফের বিরোধিতা তো রয়েছেই। শান্তিচুক্তির পর থেকে পাহাড়ে বিভিন্ন সময়ে হত্যা, লুণ্ঠন, জ্বালাও পোড়াও, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, একটি গ্রুপ চায় স্বাধীন সার্বভৌম পার্বত্য অঞ্চল। এ নিয়েও তাদের ভিতরে নানা মতবিরোধ চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আদলে পোশাকও পাওয়া যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের কাছে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির পরিস্থিতি রয়েছে নজিরবিহীন অবস্থায়। সম্প্রতি রাঙামাটির লংগদুতে উদ্ধার হয়েছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। সেনা নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী সন্ত্রাসীদের এ আস্তানায় অভিযান চালানোর পর একে-৪৭ রাইফেল, সামরিক পোশাকসহ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এরপরও আতঙ্ক কমেনি। স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জানা গেছে, যৌথবাহিনী যখনই অভিযান চালায় তখনই সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে ভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। অভিযান শেষে নিরাপত্তা বাহিনী ফিরে গেলে পুনরায় স্ব স্ব অবস্থানে ফিরে আসে। ভারী অস্ত্রের মজুদ গড়ে তোলার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে সংশ্লিষ্টদের।

লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ‘পাহাড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও স্থানীয় সবাইকে আমরা বলব, আপনারাও সতর্কভাবে চলাফেরা করুন। কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখা দিলে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করুন। আমরা সব সময় পাহাড়ের জনগণের পাশে রয়েছি।’

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অস্ত্র, লংগদু, সন্ত্রাস
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন