parbattanews

লক্ষ্মীছড়িতে শিক্ষক সংকটে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

প্রধান শিক্ষক নেই ১৫ বিদ্যালয়ে, ৩টিতে এক এবং ৬টি চলছে দু’জন শিক্ষক দিয়ে

Khagrachari-Laxmi Pic 01

বিশেষ প্রতিনিধি, লক্ষ্মীছড়ি থেকে ফিরে:
শিক্ষক সংকটে খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে নূন্যতম চারজন এবং প্রতি ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও লক্ষ্মীছড়িতে মাত্র ১ জন করে শিক্ষক দিয়ে চলছে ৩ টি বিদ্যালয়ের পাঠদান। দু’জন করে চলছে ৫টিতে এবং ১৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যাালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই।

অধিকাংশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কিছু বিদ্যালয়ে দপ্তরী দিয়ে চলছে পাঠদান। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার দূর্গম এলাকার অধিকাংশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ই জরাজীর্ণ। একটু বৃষ্টি হলে পানিকে একাকার হয়ে যায়।

লক্ষীছড়ি উপজেলার নোয়াপাড়া, দন্ডিপাড়া, মরাচেঙ্গী, বিনাছড়ি, লেলাং, মুক্তাছড়ি, ফুত্যাছড়ি, জুর্গাছড়িসহ নতুন জাতীয়করণ হওয়া আরো ৬টিসহ ১৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ খালি।

একজন করে শিক্ষক দিয়ে চলছে শুকনাছড়ি,লেলাং ও ফুত্যাছড়ি এ তিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যতীন্দ্র কার্বারী পাড়া,দন্ডিপাড়া,মরাচেঙ্গী,মুক্তাছড়ি ও জুর্গছিড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে দু’জন করে শিক্ষক দিয়ে।

বিনাজুড়ি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উদয় চাকমা জানান, এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই শতাধিক। তিনি একাই ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন।সদরে কোন মিটিং থাকলেও ঐ দিন স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের প্রাপ্য অধিকার হচ্ছে। শিক্ষার মানও হ্রাস পাচ্ছে।

এছাড়া নোয়াপাড়া, দন্ডি পাড়া, মরাচেঙ্গী, লেলাং পাড়া, ফুত্যাছড়ি, মুক্তাছড়ি ও জুর্গাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত কয়েক বছর প্রধান শিক্ষক নেই। এছড়া তিন বছর আগে জাতীয়করণ হওয়া ৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই।

এ ছাড়া যতিন্দ্র কার্বারী পাড়া, দন্ডি পাড়া, লেলাং পাড়া, ফুত্যাছড়ি ও মরাচেঙ্গী পাড়া বিদ্যালয়গুলোতে মাত্র দু’জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। জাতীয়করণ হয়নি দু’টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকুরীও। এছাড়া উপজেলার অন্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

বিনাজুড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এসএমসি সভাপতি চাইবাই মারমা জানান, বিদ্যালয়ে ২০১ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। অথচ শিক্ষক মাত্র ১ জন। এ কারণে প্রায় বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেওয়ার জন্য বহু মহলে দেন-দরবার করেও কোন ফল পাইনি। তাই হতাশ হয়ে বসে আছি।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন এসএমসির সভাপতির বাইরের উপজেলা থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কারণে এ সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। নিয়োগ পাওয়ার পর পরই তদবির করে ঐ সব শিক্ষক তার সুবিধাজনক স্থানে বদলী যান। ফলে বিদ্যালয়টি হয়ে পড়ে শিক্ষক শূণ্য।

অপর একজন এসএমসি অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগ ও বদলীতে ঘুষ-বাণিজ্যের কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ঘুষ নিয়ে বহিরাগতদের নিয়োগ দেওয়ার কারণে অনেকে কর্মস্থলে যোগ না দিয়েই সুবিধাজনক স্থানে বদলী হয়ে যান।

লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহ মো: ইকবাল মনসুর বলেন, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মসহ ২৭টি করে বিভাগ চালু আছে। একজন বা দু’জন করে শিক্ষক দিয়ে কোন অবস্থায়ই বিদ্যালয় চালানো সম্ভব না।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন জানান, দীর্ঘ দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতির বিষয়টি ঝুলে থাকায় বিদ্যালয়গুলোর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন জট খুলেছে। শীঘ্রই সংকট কেটে যাবে। আর প্রক্রিয়াধীন নিয়োগ সম্পন্ন হলে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট মোচন হবে।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জানান, শীঘ্রই শূণ্যপদের অনুকুলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এর ফলে কোন বিদ্যালয়ে আর শিক্ষক সংকট থাকবে।

Exit mobile version