লামায় সাড়ে ৩ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ


প্রশাসনকে তোয়াক্কা করছে না চক্রগুলো
বান্দরবানের লামা উপজেলায় কিছুতেই থামছে না লামা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন হতে বালু লুট। বালু লুটকারীরা পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে নিজেদেরকে শাক্তিশালী মনে করছে। বালু লুটের সুবিধার্থে সিন্ডিকেটের পরিসর ঢেলে সাজিয়েছে তারা। লোহাগাড়া ও সরই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তিদের নিয়ে সিন্ডিকেটকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে বেপরোয়াভাবে উপজেলা সরই ও আজিজনগর ইউনিয়নের ৫০টির অধিক পয়েন্ট থেকে বালু লুট করা হচ্ছে। বালু লুটের স্বার্থে সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় রাখতে সক্ষম এমন ব্যক্তিদের বালু লুট সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আনা হয়েছে। বর্তমানে বালু পাচারকারী প্রতিটি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছে সরই ইউনিয়নের বিএনপির নামধারী কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি।
এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর লামা উপজেলার বালু লুটকারীদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিস্ক্রিয় ভূমিকায় বালু পাচারকারীরা পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে ব্যাপক হারে বালু লুট করে যাচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করলেও থেমে থাকেনি বালু উত্তোলন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে যে সকল পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছে, সেসব পয়েন্ট থেকেও বালু উত্তোলন থেমে থাকেনি। এ সব বালু চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বালু পাচার হয় বলে জানা গেছে।
সরই ইউনিয়নের আন্দারী বাতখোলা, বাইঘর দোকান কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশের, মসজিদ ভিটা, ভরা গোদা, ৪নং ওয়ার্ডের কমলা খোলা, ৭নং ওয়ার্ডের জোড়মনি পাড়া, জোড়মনি পাড়া ব্রিজের পূর্ব পাশের, ৫নং ওয়ার্ডের হারেস কোম্পানির মৎস খামারের দক্ষিণের ৩০টির অধিক পয়েন্টে, আজিজনগর পূর্ব চাম্বি, আজিজনগরের বিভিন্ন ছড়া ও খালের ২০টির অধিক পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু লুটকারীরা বালু উত্তোলন করে মোবাইল কোর্টের জরিমানা দিয়ে পুনরায় একই বালু পাচার করে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনের সাথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিশেষ সখ্য গড়ে উঠেছে। যে কারণে বেপরোয়াভাবে সরই ও আজিজনগর থেকে বালু উত্তোলন করে পরিবেশের ক্ষতিসাধন করলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, বালু পাচারকারী সিন্ডিকেট জেলা সদরে গিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। ফলশ্রুতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন ধরনের প্রসিকিউশন দেওয়া হচ্ছে না।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈন উদ্দিন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুপায়ন দেব সরই ও আজিজনগরের পূর্ব চাম্বির ৬টি পয়েন্ট থেকে গত শনিবার সাড়ে তিন লক্ষ ঘনফুট বালু জব্দ করেছেন। একই সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজনগর পূর্ব চাম্বি পয়েন্টে দেড় লক্ষ ঘনফুট বালু ঘটনাস্থলে দুই লক্ষ নব্বই হাজার টাকা নিলাম দিয়েছেন।
স্থানীয় জনসাধারণ অভিযোগ করে আরও জানিয়েছেন, সরই ইউনিয়নের ডলু খাল, সরই খাল সহ বিভিন্ন প্রভাহমান ঝিরি থেকে একটি সিন্ডিকেট গত ৬ মাস ধরে অব্যাহত ভাবে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে পাচার করে যাচ্ছে। বালু উত্তোলন ও পাচারের সাথে লোহাগাড়া ও সরই ইউনিয়নের বিএনপির একটি সুবিধাভোগী চক্র এবং আওয়ামী লীগের কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পাচারের ফলে সরই ইউনিয়নের অনেক রাস্তা-ঘাট নষ্ট হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন রাতের বেলায় শত শত ট্রাক বালু সরই থেকে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিতদের কিছু অপরাধপ্রবণ ব্যক্তি বালু লুটকারীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের পরিচালক এর নিকট সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছে।
লামা উপজেলার সহকারী কমিশনর (ভূমি) রুপায়ন দেব জানান, বালু লুট, পাহাড় কর্তন ও পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।
লামা উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈন উদ্দিন জানান, সরই এলাকার কয়েকটি পয়েন্ট থেকে জব্দকৃত বালু জেলা প্রশাসক, মহোদয়ের অনুমোদনক্রমে নিলামে বিক্রয় করা হবে। পরিবেশ বিনষ্টকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।