লামায় মোটরসাইকেল চালক খুনের ঘটনায় কিশোর আটক

fec-image

লামার ফাইতং ইউনিয়নের অলিকাটা এলাকায় মোটরসাইকেল চালক খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্ত আসামি আবদুল্লাহ (১৬) কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫। ২৫ মে রাত ৮টা ৫ মিনিটের সময় র‍্যাব-১৫, কক্সবাজারের একটি চৌকস আভিযানিক দল বান্দরবান জেলার লামা থানাধীন ফাইতং ইউনিয়ন থেকে আটক করে।

চকরিয়া উপজেলার সীমান্ত ফাইতং ইউনিয়নে পাহাড়ের ঢালু থেকে মো. মুবিন নামে চকরিয়ার এক কিশোরের লাশ উদ্ধারের ছয়দিন পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে র‌্যাব-১৫। ওই কিশোর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব জানিয়েছে, মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ওই ইউনিয়নের চিউকতলী অলিকাটা এলাকায় এনে তাঁকে হত্যা করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম মো. আব্দুল্লাহ (১৬)। তাঁর বাড়ি চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নস্থ নোনাছড়ি এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে।

বুধবার (২৬ মে) দুপুর ১টার দিকে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার এর অধিনায়কের কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) ও সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।

র‌্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, ২১মে বেলা ১২টার দিকে লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের চিউকতলী অলিকাটা এলাকায় পাহাড়ের ঢালু থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে লাশ শনাক্তের চেষ্টা করে পুলিশ। পরে মুবিনের পরিবার তাঁর লাশ শনাক্ত করে। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি। এরপর র‌্যাব-১৫ এর একটি চৌকস দল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে।

র‌্যাবের কাছে তথ্য আসে তিন কিশোর মিলে মুবিনকে হত্যা করে। হত্যার পর তাঁকে পাহাড়ের ঢালুতে ফেলে দিয়ে ছিনতাই করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই সূত্র ধরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব অভিযানে নামে। চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি আব্দুল্লাহকে আটক করে।

র‌্যাবের তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ১৮মে চকরিয়া উপজেলা হারবাং নোনাছড়ি সুইচ গেইট এলাকায় আছরের নামাজের পর আসামি আব্দুল্লাহ, কায়ছার ও আব্দু রহিম মিলে মুুবিনকে হত্যার পর মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। ওইদিন পরিকল্পনা অনুযায়ী মাগরিবের নামাজের পর তিনজন মিলে চূড়ান্তভাবে ছক আঁকে কিভাবে হত্যার পর মোটরসাইকেল ছিনতাই করা যায়। নোনাছড়ি গ্রামের আসামি কায়ছারের বোনের চায়ের দোকানে সবাই একত্রিত হয়। ওই দোকান থেকে একটি স্টিলের চাকু সংগ্রহ করে তাঁরা।

একইদিন ফাইতংয়ে একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে ভাড়া যাওয়া কথা বলে রাত নয়টা ৩০মিনিটে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মুবিনকে ফোন দিয়ে আসতে বলে। ১০মিনিটের মাথায় মুবিন ওই দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়। এরপর আসামি আব্দুল্লাহ, কায়ছার ও আব্দু রহিম মিলে মোট চারজন ফাইতং ইউনিয়নের বরইতলী-চিউকতলী সড়কের অলিকাটা এলাকায় পৌঁছায়।

তখন আব্দু রহিম প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার কথা বলে কৌশলে মুবিনকে মোটরসাইকেল থামাতে বলে। এ সময় আব্দু রহিম গাড়ি থেকে নামার পর তিনজন মিলে মুবিনকে গলা টিপে ধরে। এরপর মুবিন মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে নৃশংসভাবে চাকু দিয়ে গলা কেটে দেয়। এছাড়াও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে অন্ডকোষসহ শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করা হয়। পরে পাহাড়ের ঢালুতে ফেলে দেয়।

র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) ও সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী বলেন, ‘মুবিন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি আব্দুল্লাহকে আটক করা হয়েছে। তাঁকে বান্দরবান জেলার লামা থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন