লুসাই ও পাংখোয়া জনগোষ্ঠী নিয়ে যে তথ্য দিয়েছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন

fec-image

বান্দরবানে লুসাই ও পাংখোয়া জাতিগোষ্ঠী নেই—এমন দাবি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের। অথচ বান্দরবান জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান থানজামা লুসাই নিজেই লুসাই জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। তিনি বলছেন, কমিশনের এই তথ্য বিভ্রান্তিকর।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, লুসাই ও পাংখোয়া এই দুই জনগোষ্ঠীর আদি নিবাস রাঙামাটি। তাই বান্দরবানে তাদের আসনের প্রয়োজন নেই। পাল্টা যুক্তি হিসেবে চেয়ারম্যান জানান, বান্দরবানে ১১টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস, যার মধ্যে লুসাই ও পাংখোয়া ঐতিহাসিকভাবে রয়েছে।

১৯৮৯ সালের সংশোধিত আইনেও তাদের জন্য আসন সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। তিনি লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে প্রতিবেদন সংশোধনের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। অপর দিকে, স্থানীয় সরকার কমিশনের সদস্য জানিয়েছেন, প্রতিবেদন প্রস্তাবের ভিত্তিতে তৈরি; চূড়ান্ত নয়।

কমিশনের সুপারিশে আপত্তি চেয়ারম্যানের
প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করা স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের দ্বিতীয় খণ্ডের সুপারিশে বলা হয়েছে, বম, লুসাই ও পাংখোয়া—তিন জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত জেলা পরিষদের সদস্যপদটি শুধু বম জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষণ করা উচিত।

এ জন্য আইন সংশোধনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান থানজামা লুসাই।

গত বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদের কার্যালয়ে এ প্রসঙ্গে থানজামা লুসাই বলেন, ‘আমি কলেজের শিক্ষক ছিলাম। জেলা পরিষদে এখন দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান। এরপরও বান্দরবানে লুসাই ও পাংখোয়া নেই বলে উপস্থাপন করা অত্যন্ত দুঃখজনক।

’ তিনি ১২ মে তিনি প্রধান উপদেষ্টা, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের কাছে লুসাই ও পাংখোয়া বিষয়ে কমিশনের প্রতিবেদন সংশোধনের লিখিত প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বলে জানান।

যেহেতু আদিকাল থেকে বান্দরবান জেলায় লুসাই ও পাংখোয়া বসবাস করত না এবং তাদের আদি বাসস্থান রাঙামাটি (রাঙামাটি জেলা পরিষদের তাদের আসন সংরক্ষিত আছে)। কিন্তু বম জনগোষ্ঠী আদিকাল থেকে বান্দরবানে বসবাস করে আসছে।

তাই বান্দরবান জেলা পরিষদের আসনটি শুধু বম জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত থাকা উচিত। লুসাই ও পাংখোয়াদের জন্য বান্দরবানে আসন বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা নেই।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থানজামা লুসাই বলেন, কমিশনের এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক। বাস্তবে একমাত্র বান্দরবান পার্বত্য জেলাতেই ১১টি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। ১১ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে লুসাই ও পাংখোয়ারাও আদিকাল থেকে বসবাস করে আসছেন।

জনসংখ্যা কম হওয়ায় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে বম, লুসাই ও পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর জন্য একটি সদস্যপদ রাখা হয়েছে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনে (সংশোধিত ১৯৮৯) তা সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। এ ছাড়া ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিসহ বিভিন্ন আইনেও দুই জনগোষ্ঠীর নাম রয়েছে।

থানাজামা লুসাই বলেন, ‘স্থানীয় সরকার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে চেয়ারম্যান হওয়ার দূরের কথা, সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার অধিকার থেকেও লুসাই-পাংখোয়াদের বঞ্চিত করা হবে। এমনকি চাকরিবাকরিসহ সব উন্নয়ন অংশীদারত্বের বঞ্চনার শিকার হবে।’

যা বলছে সংস্কার কমিশন
স্থানীয় সরকার কমিশনের সদস্য ইলিরা দেওয়ান জানিয়েছেন, তিন পার্বত্য জেলার বিশিষ্টজনেরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী কমিশনের প্রতিবেদনে তুলে ধরে হয়েছে। কমিশন নিজে থেকে কিছুই করেনি। তা ছাড়া এমন নয় যে কমিশন প্রস্তাব করল, সবকিছু হয়ে গেল। লুসাই ও পাংখোয়ারা সংশোধনী প্রস্তাব পাঠালে যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় বিবেচনায় নেবে।

উল্লেখ্য, বিবিএসের ২০২২–এর জনশুমারি অনুযায়ী, বান্দরবানে ১১ ভাষা নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। এর মধ্যে পাংখোয়া ও লুসাইয়ের সংখ্যা ২৭৩ জন। আর বম জনগোষ্ঠীর মানুষ আছে ১১ হাজার ৮৫৪ জন। ১৯৮৯ সালের স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ও জেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ (সংশোধিত)–এ এই তিন জনগোষ্ঠীর জন্য একটি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
                   সূত্র : প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন