শরনার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের শত শত স্কুল বন্ধের অভিযোগ করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, কর্তৃপক্ষ কী বলছে

fec-image

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য করা বাড়ি ও কমিউনিটি ভিত্তিক শত শত স্কুল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।

নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে এ সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে অন্তত ত্রিশ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

সংস্থাটি বলছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের পক্ষ থেকে গত ১৩ই ডিসেম্বর এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে যা তাদের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতারা নিশ্চিত করেছে।

কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে স্কুল যাওয়ার উপযোগী প্রায় চার লাখ শিশু আছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে কর্তৃপক্ষ এখন বাড়ি ও কমিউনিটি ভিত্তিক স্কুল গুলো বন্ধ করে দিচ্ছে।

তবে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেছেন তারা কোন স্কুল বন্ধ করছেন না।

“ক্যাম্প এলাকায় শিক্ষা হবে এক পদ্ধতিতে। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ-এর নেতৃত্বে এটি চলমান আছে ও থাকবে। তবে আমরা প্রাইভেট ও কমার্শিয়াল স্কুল ও কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করতে বলেছি। কোন বৈষম্য না করে সেখানকার সব শিশু যেন মানসম্পন্ন শিক্ষা পায় সেজন্যই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

কক্সবাজারে সরকারি হিসেবে যে ৩৪ টি রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে সেখানে নতুন ও পুরোনো শরণার্থী শিশুর সংখ্যা সব মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখের মতো।

বন্ধ হবে লার্নিং সেন্টার ?

যদিও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন নিয়েই আন্তর্জাতিক দাতাদের সহায়তায় ঘর-ভিত্তিক এসব লার্নিং সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছিলো যা সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে বন্ধ হয়ে যাবে।

প্রায় ২২ হাজার শিশু এ ধরণের স্কুলে পড়াশোনা করছে বলে সংস্থাটি তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে।

এর বাইরে ৯২ হাজার শিশু ক্যাম্পে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত আছে, যেখানে দিনে তিন শিফটে দু ঘণ্টা করে পড়ার সুযোগ পায় শিশুরা।

এখন ঘর ভিত্তিক স্কুল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চিলড্রেন রাইটস ডিরেক্টর বিল ভ্যান এসভেল্ড বলেছেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের স্কুল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত শিক্ষার অধিকারের একটি বড় আকারের লঙ্ঘন”।

“এ কঠোর সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করা উচিত যাতে করে রোহিঙ্গা শিশুরা শিক্ষা পেতে পারে। কারণ এটি তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনকে জটিল করে তুলতে পারে”।

সাহায্য সংস্থার কর্মীদের বরাত দিয়ে এই সংস্থাটি বলছে যে ঘর- ভিত্তিক শিক্ষা ও মনোসামাজিক সমর্থনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর কমিউনিটি ভিত্তিক স্কুলগুলা কিশোর কিশোরীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অভিযোগ গত ১৩ই ডিসেম্বরেই দুটি কমিউনিটি ভিত্তিক স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং এর মধ্যে একটি স্কুলেই আটশ শিক্ষার্থী ছিলো।

এছাড়া কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী এখন থেকে মিয়ানমারের শিশুরা প্রতিটি শিক্ষা কেন্দ্রে প্রতি শিফটে মিয়ানমারের জাতীয় সঙ্গীত গাইবে।

এসব কেন্দ্রে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেখানো, বাংলা লিখতে ও পড়তে পারা শেখানোও বন্ধ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেছেন বিচ্ছিন্নভাবে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেখানে কাজ করবে না বরং ইউনিসেফের নেতৃত্বে সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম হবে যেখানে সব শিশু একই ধরণের শিক্ষা পাবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন