শহীদ সৈনিক আলতাফের মায়ের বিলাপ থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই

fec-image

‘আমার মাছুম কবে এত বড় হইছে, ঘরে মা রাখি দেশের জন্য জীবন দিছে। এখন আমারে আর আমার মেয়েরে দেখবো কে? ও মাছুম তুই কবে এত বড় আর সাহসী হইলি? আমি তোকে ছাড়া কেমনে থাকমু?’ বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন বান্দরবানে নিহত সেনাসদস্য আলতাফ হোসেন মাছুমের (২৪) মা শাহীনুর আক্তার। রুমা উপজেলায় সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) হামলায় এই সেনাসদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুরে রুমা উপজেলায় কেএনএ’র হামলায় সেনাবাহিনীর দুই সৈনিক নিহত হন। এই ঘটনায় আহত হন দুই জন সেনা কর্মকর্তা। নিহত দুই সৈনিকের মধ্যে আলতাফ হোসেন মাছুমের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার কাদিরহানিফ ইউনিয়নের পূর্ব লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন মা।

জানা গেছে, মাছুমের বাবা আবুল কাশেম স্থানীয় রেলগেট এলাকায় ডেকোরেশনের ব্যবসা করতেন। ২০১৭ সালে অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। সে বছরই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন মাছুম। দুই ভাইবোনের মধ্যে মাছুম বড়। ছোট বোন সানজিদা সুলতানা মিম কলেজে পড়েন।

বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে পরিবারের হাল মাছুমের হাতে। সবশেষ ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসেন। ছুটি চলাকালে জেঠাতো ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ২৬ এপ্রিল চাকরির উদ্দেশে বাড়ি ছেড়ে যান। মা ও বোনের সঙ্গে কথা হতো মাঝেমধ্যে। তিন দিন আগে শেষবারের মতো মায়ের সঙ্গে কথা হয় মাছুমের।

মামা জহির উদ্দিন শাহিন বলেন, ‘ভাগনের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে প্রতিদিন কথা বলতাম। গতকাল তাকে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছি। কিন্তু রিপ্লাই দেয়নি। পরে আমার এক খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে প্রথম মৃত্যুর বিষয়টি শুনি।’ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

কিছুক্ষণ থেমে বলেন, ‘বোনের স্বামীর মৃত্যুর পর ভাগনে সংসারের হাল ধরেছিল। আজ দেশের টানে সেও চলে গেলো। আমার বোন আর ভাগনি একা হয়ে গেলো। এখনও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। লাশ গ্রহণের জন্য আমার ছোট ভাই জসিম উদ্দিন শামীম ও আমার বন্ধু শিপন চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে নোয়াখালীতে আনা হবে লাশ। দুপুর ১২টায় নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে তাকে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

মাছুমের প্রতিবেশী নুর উদ্দিন বলেন, ‘তার মতো নম্র ও ভদ্র ছেলে এই এলাকায় নেই। সে তার বাবার মতোই শান্ত স্বভাবের ছিল। যখন হেঁটে যেতো আমরা তাকে দেখলে বাবার কথা মনে করতাম।’

উল্লেখ্য, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রুমা উপজেলার সুংসুংপাড়া সেনা ক্যাম্পের আওতাধীন জারুলছড়ি পাড়া নামক স্থানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানার খবর আসে। এ সংবাদ পেয়ে সুংসুংপাড়া আর্মি ক্যাম্প থেকে মেজর মনোয়ারের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল মঙ্গলবার সেখানে যায়। দলটি জারুলছড়ি পাড়ার পানির ছড়ার কাছাকাছি পৌঁছালে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে কেএনএ’র আইইডি বিস্ফোরণ ও অতর্কিত গুলিবর্ষণের মুখে পড়ে। এতে দুই সেনাসদস্য ও দুই কর্মকর্তা আহত হন। তাদের উদ্ধার করে দ্রুত হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম সিএমএইচে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই সৈনিক মারা যান। আহত দুই কর্মকর্তা ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি, কেএনএ, কেএনএফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন