শান্তিচুক্তির ধারা বাস্তবায়ন হওয়াতেই পার্বত্যাঞ্চলে উন্নয়ন হচ্ছে : দীপংকর তালুকদার


শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলে উন্নয়ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি। তিনি আরও বলেন, রোডম্যাপ করলেই যে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। পার্বত্যাঞ্চলে উন্নয়ন হচ্ছে, তবে সমতলের তুলনায় অপর্যাপ্ত।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে ওই সংসদ সদস্য (এমপি) এ কথা বলেন।
এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।
নেপালের শান্তিচুক্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর বলেন, আমরা বলছি না যে শান্তিচুক্তি পুরো বাস্তবায়ন হয়েছে। নেপালে শান্তিচুক্তির রোডম্যাপ করার পরে ২০০০ সালে তাদের পুরো বাস্তবায়নের কথা ছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি। তার মানে রোডম্যাপ করলেই যে চুক্তি বাস্তবায়িত হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেকে বলছেন সরকারের আন্তরিকতা নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সামাজিক বিন্যাস এগুলোর সঙ্গে নেপালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সামাজিক বিন্যাস এক এবং অভিন্ন নয়। তবুও আলোচনার স্বার্থে নেপালের আমরা লক্ষ্য করলাম যিনি মাওবাদী নেতা পুস্প কমল দহল তিনি প্রচণ্ড নামে অধিক পরিচিত। পুস্প কমল দহল নেপালের দুইবার রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, এবারও প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, এ নিয়ে তিনি মোট তিনবার প্রধানমন্ত্রী হলেন।
সাবেক ওই প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের আন্তরিকতার প্রশ্ন যদি তোলা হয় তাহলে নেপালের শান্তিচুক্তি অনেক আগে বাস্তবায়িত হয়ে যাওয়ার কথা। যেহেতু যিনি এই অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করেছেন, বন্দুক ধরেছেন তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন, দুইবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তারপরেও তিনি সেটা করতে পারেননি। এখনও পর্যন্ত নেপালের শান্তিচুক্তি পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির (বাংলাদেশের) ঠিকই বলেছেন শান্তিচুক্তির ৭২টা ধারার মধ্যে ইতোমধ্যে ৬৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। আর ৬৫টি ধারা বাস্তবায়িত হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অবহেলিত এলাকা ছিল সেখানে রাস্তা হচ্ছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে, এক উপজেলার সঙ্গে আরেক উপজেলার কানেকশন হচ্ছে, স্কুল, কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এবং ন্যাশনাল ইন্টিগ্রিটির প্রশ্নের যে দুর্বলতা ছিল মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ন্যাশনার ইন্টিগ্রিটি কি সেটা বুঝতে পারছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সব সময়ই একটি বিশেষায়িত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। এখানকার প্রশাসনও বিশেষ। সুতরাং সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি সার্কুলার হয়েছে নতুন প্রকল্প নেওয়া যাবে না, নতুন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না এবং সেসব কাজের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে কিন্তু অর্থ যায়নি সেখানে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যাবে না ও চলমান কাজের জন্য ৫০ শতাংশ অর্থ ছাড় দেওয়া হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে উন্নয়নের ধারা শুরু হয়েছে এটা এখনও সমতল ভূমির তুলনায় অপ্রতুল। তাই এই যে অর্থ মন্ত্রণালয় যে নতুন সার্কুলার জারি করেছে তা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য শিথিল করা যায় কিনা ভেবে দেখা দরকার।
দীপঙ্কর তালুকদার বলেন, আমি বলতে চাই, বান্দরবানের ম্রু গ্রামে পর পর কয়েকবার অগ্নিসংযোগ করা হলো, কারা অগ্নিসংযোগ করেছে এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত, সুষ্ঠু তদন্তের পর দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। যাতে এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গ্রামগুলোতে আর এ ধরনের অগ্নিসংযোগ না ঘটানো হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবরণের পর কে কোথায় ছিলেন। আমরা যারা ছাত্রলীগ করেছি, যুবলীগ করেছি আমাদের হাত তখন অত প্রশস্ত ছিল না, বেশি দায়িত্ব দেওয়ার মতো আমাদেরও সক্ষমতা ছিল না। তারপরেও আমাদের পক্ষ যতখানি সম্ভব করার চেষ্টা করেছি। আমরা সূর্যের আলো জ্বালাতে পারিনি কিন্তু আমরা প্রদীপের আলো জ্বালানোর চেষ্টা করেছি। কেউ বলতে পারবে না, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে সশন্ত্র প্রতিবাদ হয়নি, সশন্ত্র প্রতিবাদ হয়েছে। যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করেছে সশন্ত্রভাবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়টি সব সময় বিচারের দাবি রাখে। আমরা জানি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ যদি না হয় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের স্বীকৃতি আরও বিলম্বিত হবে। আমরা চাই যে প্রতিরোধ যোদ্ধা তারা যে কাজ করেছেন সে কাজের স্বীকৃতি যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া হয়।