parbattanews

শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন চাইবো অথচ অস্ত্র ছাড়বো না এ কেমন যুক্তি- ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুক

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

পাহাড়ে শান্তিচুক্তির পর সেখানে অস্ত্রের কোন স্থান থাকার কথা নয়। আমি শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন চাইবো অথচ আমি অস্ত্র ছাড়বো না, এটা কেমন যুক্তি? বুধবার (১৬ মে) সকালে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলার হেডম্যান কার্বারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩০৫ ব্রিগ্রেডের কমান্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফারুক এ প্রশ্ন রাখেন।

এ মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন রাঙ্গামাটি সদর জোন কমান্ডার রেদওয়ানুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শফি কামাল, রাঙ্গামাটি হেডম্যান কার্বারী এসোশিয়েনের সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।

ব্রিগ্রেড কমান্ডার বলেন, পাহাড়ীদের তারা বুঝিয়েছে যে, তারা জুম্মল্যান্ড করবে। কিন্তু জুম্মল্যান্ডতো করতে পারেনি। তা কখনো করাও সম্ভব নয়। আপনারা সাধারণ মানুষদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলের আশে-পাশে যেসব ভারতের অঙ্গ রাজ্যগুলো রয়েছে, তাদের ওখানেও একই সমস্যা। তাই বলে কি ভারত সেইসব রাজ্যগুলো ছেড়ে দিবে। ভারতের মত শক্তিশালী একটি দেশ কি মিজোরামকে কি অন্য একটা রাষ্ট্র গঠন করতে দিবে। কখনো না, প্রশ্নই উঠে না। একইভাবে বাংলাদেশেও সম্ভব নয়।

ব্রিগ্রেডিয়ার গোলম ফারুক বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে তারা শান্তিচুক্তির জন্য চেষ্টা করেছেন। অন্যায়ভাবে যারা অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন, তারা কিন্তু ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এই ৫ বছর কোন যুদ্ধ করেনি। এই পাঁচ বছর তারা একতরফাভাবে অস্ত্র বিরতি করেছিল। কারণ তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। এমন নয় যে, তারা যুদ্ধ করে জয় লাভ করে শান্তিচুক্তির জন্য সরকারকে বাধ্য করেছিল। সুতরাং এমন ভাবার কোন কারণ নেই যে, তারা শক্তিশালী। তারা শেষ হয়ে যাওয়ার আগে বেঁচে গেছেন। কিন্তু ঐ পাঁচ বছর চাঁদা দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, শুধু তাই নয় শান্তিচুক্তির পর আপনাদের যে শান্তি পাওয়ার কথা সে শান্তি আপনারা পাননি। শুধু কিছু মুষ্টিমেয় যারা বিভিন্ন পদ-পদবী, চাকুরি, পুনর্বাসন প্রভৃতি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে তারাই এই শান্তিচুক্তির সুফল পেয়েছে। আমি যদি শান্তিচুক্তি করলামই তাহলে অস্ত্র রাখি কি করে? এখন যদি রাষ্ট্র বলে, তোমরা অস্ত্র ধারণ করে রেখেছো, শান্তিচুক্তি এখন আর বাস্তবায়ন হবে না। তাহলে কি রাষ্ট্র অন্যায় করবে? কারণ অস্ত্রধারীরা এখনো বিরাজমান এখানে। যেখানে অস্ত্র নিয়ে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, মানুষকে নিষ্পেষিত করছে।

রিজিয়ন কমান্ডার আরো বলেন, গত ৪-৩ মে নানিয়ারচর হত্যাকান্ডে ঘটনায় মামলা হয়েছে। সকলকে বলতে চাই, যারা সাধারণ মানুষ, তারা কখনো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আপনারা নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে চলাফেরা করুন, স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করেন। পালিয়ে বেড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। যারা পালানোর তারা পালাবেই। কারণ তারা জানে, তারা কি করছে। সন্ত্রাসীদের কোন ছাড় নেই।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য অঞ্চল থেকে সরকারের কোন রাজনৈতিকভাবে চাওয়া পাওয়া নেই, এমনকি তারা আসন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন না কিন্তু এলাকার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক, তাই আমরা উন্নয়নের স্বার্থে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে সরকারের একটাই চিন্তা, পাহাড়ের মানুষগুলো যেন ভালো থাকে, শান্তিতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য অঞ্চল আজকে যদি মিল কারখানা হতো, আজকে পার্বত্য অঞ্চলে যদি পর্যটন বিকাশে কাজ করতে দেওয়া হতো। তাহলে আয় রোজগারের ব্যবস্থা হতো, পাহাড়ের আজকে প্রতিটি পরিবার সুখে শান্তি বসবাস করতে পারতো। জঙ্গলের ভিতর কষ্ট করতে হতো না। কিন্তু পর্যটন বিকশিত করার কাজে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। উন্নয়নের সকল কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যে একটাই তারা বাধা দিচ্ছে তাদের জন্যই। তাদের অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়ন্ত্রণ যেন টিকে রাখা যায়। সেইজন্যে বিভেদ সবসময় রাখতে চাই তারা।

কেউ কেউ বলে যারা এইসব করে তারা, কোন না কোন রাজনৈতিক দলের অংশ। আমরা বলবো না, তারা রাজনৈতিক দলের অংশ না, তারা সুবিধাবাদী চক্র। তারা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য এগুলো করে। তারা নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করে, নিজেদের টাকা উপার্জন করার জন্য তারা এইসব করে। কিন্তু তারপরের তারা কোন না কোন দলে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় নেয়। বাঁচার জন্য। সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে বোঝানোর জন্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে মুক্ত চিন্তা, মুক্ত গণতন্ত্রের আলোকে নিজেরা রাজনীতি করবে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু তার সাথে সাথে সকলকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামাজিক ভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

তিনি হেডম্যান কার্বারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস রয়েছে। কেন আপনারা প্রশ্ন করেন না শান্তিচুক্তির পর কেন চাঁদা দিতে হবে? শান্তিচুক্তির পর কোন আমাদের জীবনে অশান্তি হবে? আপনি হয়তো এককভাবে শক্তিহীন। কিন্তু আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের মতো এলাকার সকল কার্বারী একসঙ্গে জেগে ওঠেন তাহলে অস্ত্রবাদ, সন্ত্রাসীরা পিছপা হবে এবং তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য। তাই পাহাড়ে অাপামর জনতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে দাঁড়ান। প্রত্যেক এলাকায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন এবং অস্ত্রবাদীকে না বলুন। এখন থেকে সবাই একসাথে সন্ত্রাস, অস্ত্রবাদ এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

মতবিনিময় সভার আগে জেলার বিভিন্ন উপজেলার হেডম্যান-কার্বারী তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

Exit mobile version