parbattanews

শান্তির পতাকাবাহী শিশু এখন যুবক

১৯৯৮ সালের ৫ মার্চ; বৃহস্পতিবার। দিনটি ছিল শান্তিবাহিনীর সর্বশেষ দলের আনুষ্ঠানিক অস্ত্র সমর্পণের শেষ দিন। খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার দুদকছড়া এলাকাতেই এক আনন্দমুখর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, মহিলা ও যুদ্ধাহত’সহ সেদিন ২শ ২২ জন অস্ত্র সমর্পণ করেছিল।

কেউ কেউ দূর পাহাড় থেকে মাথায় সাদা হলুদ-ব্যান্ড বেঁধে শান্তির স্লোগান নিয়ে এসেছিল অনুষ্ঠানস্থলে। অবুঝ এক শিশুর হাতে শোভা পেয়েছিল সাদা দুটি শান্তির পতাকা। পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে সেদিন সাদা পতাকা হাতে যে শিশুটি বিশাল ভূমিকা পালন করেছিল সে বিশ্বান্তর চাকমা।

দেড় বছর বয়সী সেই বিশ্বান্তর এখন আর শিশু নেই। সে এখন চট্টগ্রাম বিশ্বাবিদ্যালয়ে পড়ুয়া যুবক। তার বাবার নাম কল্প রঞ্জন চাকমা আর মা পদ্মাসোনা চাকমা। লোগাং ইউপির অনিল পাড়া তাদের সাবেক বসবাস থাকলেও বর্তমানে পূজগাং মাস্টার পাড়ায় স্থায়ীভাবে বাস করছে।

বিশ্বান্তরের বাবা কল্প রঞ্জনের সাথে শান্তিবাহিনীর সর্বশেষ দলের আনুষ্ঠানিক অস্ত্র সমর্পণের শেষ দিনটি নিয়ে কথা বলে জানা যায়, বিশ্বান্তর ছিল তখন দেড় বছরের শিশু। সেদিন পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী চাঁদের গাড়িতে করে আমরা দুদুকছড়ায় যাই। আমার ছেলের হাতে থাকা দুটি সাদা পতাকা দিয়েই শান্তির আহ্বান জানানো হয় সেদিন। এ নিয়ে আমি বাবা হিসেবে সব সময় গর্ববোধ করি। তবে ঘটনাস্থলে যাওয়ার ব্যাপারে বর্তমান পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার দেব সব ধরণের উৎসাহ যোগান দিয়েছিল বলে জানায়।

শান্তির পতাকাবাহী বিশ্বান্তরের সাথে কথা বলে জানা যায়, সে চট্টগ্রাম বিশ্বাবিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে। ভবিষ্যতে মেডিসিন কোম্পানিতে চাকরি করার ইচ্ছা পাশাপাশি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতে দেশের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছাও রয়েছে।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে অশান্ত পাহাড়ে ফিরে আসে শান্তির সু-বাতাস। যার পর থেকে পার্বত্য এলাকাকে সাজানো হচ্ছে ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে। এরি মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন পাকা সেতু, মডেল মসিজদ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, টিসিবি পণ্য, সীমান্ত সড়ক, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দৃষ্টিনন্দন পাকা ঘরসহ নানান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড শোভা পাচ্ছে পাহাড়ের অলি-গলিতে।

Exit mobile version