শিল্পীর তুলিতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবনচিত্র

fec-image

শিল্পী জুলিয়ান বম এঁকেছেন পিঠে বোঝা নিয়ে দুই নারী-পুরুষের পাহাড় ডিঙানোর ছবি। দয়াল মোহন চাকমা এঁকেছেন ঝিরির জলে দুই নারীর কাজ পানি ভরার দৃশ্য—এমনি করেই পাহাড়ি মানুষ জীবন ও তাদের সংগ্রামের কথা উঠে এসেছে শিল্পীদের তুলিতে। পাহাড়ি শিল্পীদের ছবি নিয়ে ধানমন্ডির গ্যালারি ২৭ এ শুরু হয়েছে ‘দি রিফ্লেকশন অফ দি হিল’ শীর্ষক তিন দিনের চিত্র প্রদর্শনী। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। পাহাড়ি শিল্পীদের সংগঠন হিল আর্টিস্টস গ্রুপ এর আয়োজনে এ প্রদর্শনীতে ১৯ জন শিল্পীর ৬০টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিবাসীরা প্রকৃতি-ঘনিষ্ঠ জীবনযাপন করেন। সেই পাহাড়ি অঞ্চলের বেড়ে ওঠা শিল্পীদের তুলিতে উঠে এসেছে তাদের জীবন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। ক্যানভাসে পাহাড়ি প্রকৃতি উজ্জ্বল উপস্থাপন যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে পাহাড়ি মানুষের সংগ্রামী জীবনের চিত্র। উজ্জ্বল রঙের ব্যবহারে উঠে এসেছে তাদের মাটি-ঘনিষ্ঠ জীবনযাপন। বাংলাদেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ কৃষ্টি ও সংস্কৃতির এক অনুপম লীলাভূমি। আমাদের রয়েছে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আচার অনুশীলন, জীবনচিত্র ও বিভিন্ন সুকুমার বৃত্তি আমাদের সংস্কৃতির তাত্পর্যপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশে প্রায় ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বসবাস রয়েছে। সেসব জাতিগোষ্ঠীর অধিকাংশেরই নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবে তাদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গগুলো আজ যথাযথভাবে বিকশিত হচ্ছে না। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পার্বত্য জেলা উন্নয়নে বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাবন্ধিক গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। সভাপতিত্ব করেন হিল আর্টিস্টস গ্রুপের সহসভাপতি ধনমনি চাকমা।

নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ি শিল্পীদের পাহাড়ি জীবনের কথা আরো বেশি বেশি তুলে ধরতে হবে। আমাদের অনেক ভালো শিল্পী ছিলেন যাদের কাজ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। এখনকার প্রজন্ম তাদের কাজ দেশের সব মানুষের সামনে তুলে ধরছে এটা খুবই অনুপ্রেরণামূলক উদ্যোগ।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এই প্রদর্শনীতে পাহাড়ি মানুষের জীবন ও প্রকৃতি নিখুঁতভাবে উঠে এসেছে। উঠে এসেছে পাহাড়ি মানুষের হাসিকান্না। এভাবেই নানা আয়োজনের মাধ্যমে সমতলের মানুষের মাঝে পাহাড়ি মানুষের জীবনযুদ্ধ তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শিল্পীরা হলেন ধনমনি চাকমা, লাভলি চাকমা, রনেল চাকমা, জয়দেব চাকমা, মিংকু চাকমা, উদয় শংকর চাকমা, দয়াল মোহন চাকমা, জিং মুন লিয়ান বম, ফাল্গুনি চাকমা, জুবলি দেওয়ান, নান্টু চাকমা, ভন রাম থ্লির বম, জুলিয়ান বম, হ্লুবাইসু চৌধুরী, সাপু ত্রিপুরা, মৃদুলি চাকমা, দিব্য আলো চাকমা, খিং শাই মং মারমা ও লিন্ডা লাল থুয়াই পার লুসাই। প্রদর্শনী চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উত্সবে ‘ঝান্ডির গান’

শিল্পকলা একাডেমিতে চলমান ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উত্সবের ১৭তম দিনে গতকাল বিকাল চারটায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে একাডেমির নন্দনমঞ্চে শুরু হয় দিনের আয়োজন। এরপরে অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শন করে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পর্বে সমবেত সংগীত পরিবেশন করে শুপ্ত, সাফিন ও শুশমি। একক সংগীত পরিবেশন করে প্রিয়াংকা রবি দাস। দলীয় আবৃত্তি করে স্বরব্যাঞ্জন এবং একক আবৃত্তি করেন শিমুল মোস্তফা। সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাঙ্গন এবং সমবেত যন্ত্র সংগীত পরিবেশন করে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। জেলা পরিবেশনা পর্বে অংশ নেয় ফরিদপুর, নোয়াখালী ও শেরপুর জেলার শিল্পীরা। সবশেষে রাত ৮টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে পরিবেশিত হয় কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ‘ঝান্ডির গান’। ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার শেষ হবে এই উৎসব।

সুত্র: ইত্তেফাক

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ঝান্ডির গান, শিল্পকলা একাডেমি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন