শৃঙ্খলা রক্ষায় খাগড়াছড়ি বিএনপিতে বহিষ্কারের হিড়িক
দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় খাগড়াছড়ি বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে বিরুদ্ধে শাস্তির বন্যা বইছে। এ পর্যন্ত অন্তত ডজন খানিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার ও পদ স্থগিতসহ নানা শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়-সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়াসহ নানা অভিযোগ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর খাগড়াছড়িতে বিএনপি নামধারী কিছু সুবিধাবাদী হুমকি-ধামকি দিয়ে চাঁদাবাজি ও দখলবাজি শুরু করে।
অভিযোগ রয়েছে, যারা এ সব অপকর্মে নেমেছিল, তাদের বিগত দিনে বিএনপির কোন কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।
এই ধরনের অরাজক পরিস্থিতি ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি। যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা রোধে দলীয় নেতাকর্মীসহ ছাত্র-জনতাকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভুইয়ার নির্দেশে শহরে মাইকিং করা হয়। জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় সংখ্যালঘুদের মন্দির ও বিহারে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাহারা বসায় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এছাড়া আরো অভিযোগ রয়েছে, পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে জনরোষে পড়ার আশঙ্কায় সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পালিয়ে গেলে তাদের বাড়ি-ঘরে হামলে পড়ে বিক্ষুদ্ধ জনতা। এমন পরিস্থিতি লুফে নেন স্থানীয় বিএনপি নামধারী কিছু সুবিধাবাদী। অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও মালামাল নিজেদের জিন্মায় নিরাপদে রাখে। অর্থের বিনিময়ে অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। আবার অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ভোলপাল্টে বিএনপির সাথে মিশে যায়। যা ক্ষুব্দ করেছে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের।
এ দিকে অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সুবিধা দেওয়াসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অভিযোগে খাগড়াছড়ি বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক ডজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার ও পদ স্থগিতসহ নানা শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে মানিকছড়ি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন, সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন, মানিকছড়ি সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব বেলাল হোসেনকে বহিষ্কার ও মানিকছড়ি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে।
বিএনপির বেশ কয়েক জন ত্যাগী নেতা নাম প্রকাশ না শর্তে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। সহায়-সম্পদ হারিয়েছি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাসহ তার দোসররা পালিয়ে যাওয়ার পর কিছু বিএনপি নেতা খাই খাই শুরু করেছে। হাব-ভাব এমন যে দল ক্ষমতায় এসে গেছে। অনেকে সুবিধা নিয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের উপর হামলাকারী রক্ষা করে নিজের পক্ষে পাল্লাভারী করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের বিএনপি বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছে। বসন্তের কোকিলদের ভারে ত্যাগী বিএনপির নেতাকর্মীদের বসার জায়গা পর্যন্ত থাকছে না।
এ প্রসঙ্গে, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার বলেন, দলে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে খাগড়াছড়ি বিএনপি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ত্যাগীরা মূল্যায়ন অবশ্যই পাবে। সুবিধাবাদীদের জায়গা বিএনপিতে হবে না। যারা দলে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে বিএনপি তাদের বহিষ্কারসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।