সংবিধান মেনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্য সংরক্ষণে কাজ করছে সরকার: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
‘সরকার জাতীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্য সংরক্ষণ, পরিচর্যা, বিকাশ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বর্তমানে ৭টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মাধ্যমে আরও ৩টি নতুন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।’সংস্কৃতি ধারণ, লালন ও চর্চার মাধ্যমেই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহমান থাকে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ২য় ভাগের ২৩ক ধারায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বৈচিত্র্যময় ও বর্ণিল সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ রয়েছে। সে সাংবিধানিক ম্যান্ডেট অনুযায়ী, সরকার তফসিলভুক্ত ৫০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সংরক্ষণ, পরিচর্যা, বিকাশ ও উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার যথেষ্ট সচেতন ও আন্তরিক।
প্রতিমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে চাকমা সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় লোক কাহিনী অবলম্বনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট খাগড়াছড়ি কর্তৃক চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম গীতি-নৃত্য-নাট্য ‘রাধামন-ধনপুদি’র পরিবেশনা উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন পার্বত্য জেলা পরিষদ খাগড়াছড়ির সদস্য শতরূপা চাকমা।
প্রধান অতিথি বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন-২০১০’ অনুযায়ী ৭টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে নওগাঁ, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও দিনাজপুরে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসমূহের সংস্কৃতি সুরক্ষার জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং জনবল কাঠামোও অনুমোদিত হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ তিনটি প্রতিষ্ঠান আইনের মাধ্যমে পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসাবে যাত্রা শুরু করবে। এ তিনটি সহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টিতে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর অবকাঠামো উন্নয়নে ইতোমধ্যে দুইটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি জেলার প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনসাধারণের সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে।
কে এম খালিদ বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে গিরি, নির্ঝরিণী হ্রদ এবং অরণ্যের মায়াবী লীলা নিকেতন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসকারী চাকমাদের শ্রেষ্ঠ লোকগীতি ‘রাধামন ধনপুদি’। এতে চাকমাদের কিংবদন্তি বীর রাধামন এবং তার অনিন্দ্য সুন্দর রূপসী প্রেমিকা ধনপুদির অনবদ্য প্রেমের কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এসব কাহিনীর প্রতিটি পর্বই বেশ রোমান্টিক যা প্রকৃতপক্ষে বিশ্বসাহিত্যের লাইলি-মজনু, রোমিও-জুলিয়েটের প্রেমকাহিনীর মতো।
সভাপতির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর বলেন, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য একটি দেশের সম্পদ। আমাদের পাহাড়ে ও সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের রয়েছে সেরকম বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। ইউনেস্কো’র Intergovernmental Committe for Intangible Cultural Heritage এর সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় ও বর্ণিল সংস্কৃতি সংরক্ষণে দায়বদ্ধ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়ি এর উপপরিচালক জিতেন চাকমা।
উল্লেখ্য, চাকমাদের গীতি-নৃত্য-নাট্য ‘রাধামন-ধনপুদি’র এটি ১০ম পরিবেশনা। চাকমা সমাজের জনপ্রিয় তিনটি গীতধারা হচ্ছে গেংখুলি, উভোগীত, টেঙাভাঙ্গা গীত। এ তিনটি গীতিধারার সমন্বয়ে কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে রাধামন ধনপুদির বিভিন্ন কাহিনী ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথম পর্বে উভোগীতের সুরে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-প্রকৃতি, মানুষের জীবনধারা এবং তাদের ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্বে চাকমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় গীতি ধারা গেংখুলির বাঁশির সুরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের প্রধান পেশা জুমচাষকে কেন্দ্র করে যেসব আচার লোকবিশ্বাস রয়েছে সেগুলোকে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই গেংখুলি শিল্পীরা আজ বিলুপ্তপ্রায়। তৃতীয় পর্বটি সাজানো হয়েছে রাধামন ধনপুদির চিরায়ত প্রেমকাহিনী, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ঘিলেখেলার বিভিন্ন আঙ্গিক এবং এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বিঝুকে কেন্দ্র করে যে বৈচিত্র্যময় উৎসব পালন করা হয় সেটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।