সংবিধান সংস্কারে আমার ভাবনা
১. সংবিধানে বাংলাদেশের এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থাকে অটুট রাখতে হবে। বর্তমানেও বাংলাদেশ এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার অধীন একটি রাষ্ট্র। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ১৯০০ সালের শাসন বিধি, ১৯৮৯ সালের জেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৭ সালের চুক্তি এবং চুক্তির আলোকে সংশোধিত জেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮, ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন এবং আঞ্চলিক পরিষদ আইন-১৯৯৮ সেখানে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছে। এটা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করছে এবং অন্যদিকে সেখানে বাংলাদেশ সরকারের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে তুলছে। এর সুযোগ নিচ্ছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা। তারা সেখানে রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি রাষ্ট্র তৈরির পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিচ্ছে। এই অবস্থা চলমান থাকলে অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার আশঙ্কা প্রবল। বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসন/আইন ব্যবস্থা রহিত করে সমগ্র দেশের সাথে সেখানকার নাগরিকদেরও উন্নয়নের একই স্রোতে শামিল করতে হবে।
২. সংবিধানে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদে’র বিরোধিতা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। যদিও এর পেছনে অন্য একাধিক কারণও ছিল বা আছে। তারপরও ১৯৭২-৭৩ সালে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এবং তার সঙ্গীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তাদের জাতীয় পরিচয়কে বিলুপ্ত করার অপপ্রয়াস হিসেবে প্রচার করে কিছু মানুষকে উত্তেজিত করে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূচনা করেছিলেন। সেই যন্ত্রণায় আজও জ্বলছে বাংলাদেশ। তাই এর অবসানে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ অন্তর্ভুক্ত করে সকল জনগোষ্ঠিকে সমান অধিকার ও সম্মান নিয়ে একই ছাতার নিচে বাঁচার সুযোগ দিতে হবে।
৩. সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির মধ্যে অবশ্যই ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৪. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ফ্লোর ক্রসিংয়ের ধারা বলবত রাখার প্রয়োজন আছে। কেননা এই ধারা বাতিল করা হলে দেশে স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা বলে কিছু থাকবে না। দেখা যাবে, দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষীরা যে কোনো সিদ্ধান্ত তাদের পক্ষে নেয়ার জন্য গোপনে অবৈধ অর্থ লেনদেন করে বা নানা ট্রাপে ফেলে এমপিদের কব্জা করে দেশের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর আশঙ্কা রয়েছে।