সংলাপে ২০টি বিষয়ে আমাদের কথা বলতে হবে : আলী রীয়াজ


রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম ধাপের সংলাপে অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হলেও মৌলিক কিছু বিষয়ে মতৈক্য ছিল বলে জানিয়েছেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেছেন, এর বাইরেও আমাদের হিসাব মতে প্রায় ২০টির মতো বিষয় আছে, যেগুলো নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। যেগুলোকে আমরা মনে করছি, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষেত্রে বিশেষে যেগুলোকে মৌলিক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতক দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের নবম দিনের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল বুধবারের আলোচনায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন, বিচার বিভাগীয় বিকেন্দ্রীকরণ এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, শুধু এখানে নয়, আমরা এটা জানি আপনারা দলগতভাবে, জোটগতভাবে পরস্পরের মধ্যেও বিভিন্ন রকম আলাপ আলোচনা করছেন। যেটা ইতিবাচক। কারণ এখানে বসে আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। আমরা দলগুলোকে অনুরোধ করেছিলাম আপনারা সমমনা দল, সংগঠন, জোটের সাথে কথা বলুন। আমরা কিছু অনানুষ্ঠানিক খবর পাচ্ছি। যাতে অনুপ্রাণিত হচ্ছি।
তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে গত ৫৩ বছরে আলোচনার সুযোগ হয়নি। সে সুযোগ অত্যন্ত কষ্টের মধ্য দিয়ে, অনেক রকম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, আত্মদানের মধ্য দিয়ে এখানে এসেছি। আলোচনার ইতিবাচক দিক আছে, পরস্পরকে জানা বোঝার দিক থেকে।
প্রথম ধাপের সংলাপের আলোচনার কাঠামোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কাঠামোগতভাবে বা প্রক্রিয়া হিসেবে আমরা যেটা করছি, সেটা হচ্ছে আমরা যে সমস্ত বিষয় প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দলগত, জোটগত আলোচনায় ঐকমত্য আসেনি, সেই সমস্ত মৌলিক বিষয়গুলোকে এখানে উপস্থাপন করেছি। সেখানে অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছি।
দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে গত কয়েক দিনের আলোচনার বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন বিষয়ের প্রাথমিক আলোচনার জায়গাগুলো উপস্থাপন করছি। সেজন্য অনেক সময় আপনাদের কাছে মনে হবে যে গতকালের অসম্পূর্ণ আলোচনা কেন আজকে আবার শুরু করছি না।
এর একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে, প্রাথমিক প্রক্রিয়ার আলোচনায় দলগত অবস্থানগুলো বুঝতে পারি। অন্যদের যুক্তিগুলো বুঝতে পারি। সেই যুক্তিগুলো নিয়ে যেন দলের অভ্যন্তরে এবং জোটে সহযোগী সমর্থকদের সাথে কথা বলতে পারেন, সে সুযোগটা আমরা রাখতে চাচ্ছি।
পরবর্তী পর্যায়ে দেখা যাবে, যেগুলো নিয়ে আমরা সহজে এক জায়গায় সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হতে পারব। সেই কারণে আমরা এখন যে সমস্ত বিষয় অমীমাংসিত থেকে গেছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছি।
আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান পরিবর্তন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আলোচনার ক্ষেত্রে সেটাও বিবেচনায় রাখছি, আমাদের সাথেই আছে। তারপরেও মনে হয়েছে, আলোচনায় আপনাদের অবস্থান আরো জোরদার হবে। অবস্থান নিয়ে যুক্তি প্রদর্শন করতে পারবেন। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি।
আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, আজকে তিনটি বিষয় আলোচনা করতে পারব। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি একমত হন তাহলে কোন একটা বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে পারব। আমরা একটা সিদ্ধান্তের জায়গায় আসতে পারলে সেটা হবে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক। দিনের শেষে আমরা সবাই শুধুমাত্র আলোচনার মধ্য দিয়ে যে যতটা সমৃদ্ধ হতে পারব, বাইরেও যেন তার সাফল্য নিয়ে দিনটা শেষ করতে পারি। সেই জন্যই আমাদের চেষ্টা থাকবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ আপনাদের কর্মীরা যেভাবে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের এখানে প্রস্তুত করেছেন। তাদের আমরা প্রতিদিনই স্মরণ করি। তাদের জীবন বাজি রাখার সংগ্রামের পরিণতির কারণে আমরা এখানে এসেছি।
সেটা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে এবং সেটাই আমাদের গাইডিং প্রিন্সিপাল হয়, সেটাই যেন আমাদের নির্দেশক হয়, অনেক প্রাণের বিনিময়ে, অনেক অত্যাচার নিপীড়নের মোকাবেলা করে এবার একটা সম্ভাবনার জায়গায়, সুযোগের জায়গায়, যে সুযোগ অতীতে আসেনি,
সেখানে আমরা এসেছি, এই সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না, এই সুযোগে আমাদের যতটুকু সম্ভব প্রত্যেককে ব্যক্তি হিসেবে, দল হিসেবে, জোট হিসেবে, নাগরিক হিসেবে সে ভূমিকা রাখতে হবে। আশা করি, সেটা আমরা সকলে মনে রাখি।