সংস্কারের অভাবে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার মাঠ যখন পুকুর!

fec-image

বর্ষা এলেই খেলার মাঠটি মাসের পর মাস জলমগ্ন হয়ে ডুবে থাকে। চারদিক পানি থৈ থৈ করছে। দেখলে যেন কারো মনে হবে মাঠটি পুকুর বা বদ্ধ জলাশয়। চিত্রটি চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলার জি,এন,এ মিশনারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মাঠটি নিমজ্জিত হয়ে যায়। পানিতে ডুবে থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আশ-পাশের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ, উঠতি যুবকরা মাঠে খেলতে ও অনুশীলন করতে বড়ই দুস্কর হয়ে পড়ে।

শুষ্ক মৌসুম হলে যেমন তেমন, বর্ষা এলেই পুরো মাঠটি হাটু পরিমাণ পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পুকুরে পরিণত হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জি,এন,এ মিশনারী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশে ধর্মীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়মিত খেলাধুলা করার প্রধান মাঠ হচ্ছে জি, এন, এ মিশনারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ।

এ খেলার মাঠটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও এলাকার ক্ষুদে তরুণ ফুটবলার এবং যুবকেরা নানা ধরণের খেলাধুলা করতে এ মাঠ ব্যবহার করে আসছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসলেই পানি নিস্কাশনের কোন ধরণের ব্যবস্থা না থাকায় জলমগ্ন অবস্থায় ডুবে থাকে। এতে মাঠেই ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবলসহ সব ধরনের খেলাধুলা জলাবদ্ধতার জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।

মাঠ সংলগ্ন রয়েছে একটি পুরনো বাজার, যা শামশু মিয়ার বাজার নামে পরিচিত। বাজারে সকাল-সন্ধ্যায় প্রচুর লোক সমাগম ঘটে এবং অনেক সওদা-পাতিও বেচা-বিক্রি হয়।

ইউনিয়নের একমাত্র উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল থাকায় মাঠে খেলতে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীর সমাগম ঘটে।

তাছাড়া পাশে একটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদও রয়েছে। বৃহত্তম জানাযার নামাজও আদায় হয় এ মাঠে। মাঠটি ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এই মাঠে দেশের জাতীয় বিভিন্ন খ্যাতিমান ফুটবল খেলোয়াড়রা খেলে গেছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, একসময় এই মাঠের জৌলুস ছিল। প্রসিদ্ধ এ মাঠ স্টেডিয়াম হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো। জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় এই মাঠে খেলে গেছেন। এটি ঐতিহাসিক স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। এছাড়াও বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন চিত্ত বিনোদন ও বড় ধরনের সভা সমাবেশ অনুষ্ঠান হয় এ মাঠে। সঠিক কোন ধরণের রক্ষনাবেক্ষণ দায়িত্ববান ব্যক্তি না থাকার সুবাধে বর্তমানে বিশাল এ মাঠটি যেন এখন অভিভাবকশূন্য। মাঠে পর্যাপ্ত পয়ঃ নিষ্কাশনের কোনও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে সয়লাব। আর বর্ষা মৌসুমে থাকে হাঁটুপানি, যা মাছ চাষের জন্য উপযোগী!

শামসুমিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা গোফরানুর রহমান চৌধুরী বলেন, এ মাঠে খেলাধুলা করে নিজেরাই বড় হয়েছি। সংস্কারের অভাবে বর্ষা মৌসুমে হাঁটুপানিতে মাঠ ডুবে থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত। মাঠ শুকনো থাকলে এলাকার যুবসমাজ ব্যস্ত থাকে নানা ধরণের খেলাধুলায়। ফলে মাদকের ছোবল থেকেও তারা রক্ষা পায়। যত বেশি ক্রীড়াচর্চা হবে ততবেশি এলাকার উঠতি যুবসমাজ মাদক থেকে দূরে থাকবে। কিন্তু এই মাঠের পানি দেখলে যেন কারো মনে হবে এটি একটি পুকুর কিংবা বদ্ধ জলাশয়।

তিনি আরও বলেন, মাঠটি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে বছর জুড়ে খেলাধুলার উপযুক্ত করে তুলতে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রীড়া বক্তিত্ব আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদীর কাছে এলাকার ক্রীড়াপ্রেমী তরুণসহ সকল সচেতন মহলের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খেলাধুলা, পুকুর, মাঠ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন