সন্তু লারমার ভারত সফর নিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা

fec-image

ভারত সফরে গেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। গত শনিবার তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় পৌঁছান।

সেখান থেকে তিনি দিল্লিতে যাবেন এবং চলতি সপ্তাহেই প্রতিবেশী এই দেশটির জাতীয় রাজধানীতে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সোমবার (৮ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বা সন্তু লারমা ভারতে এসেছেন বলে একটি সূত্র দ্য হিন্দুকে নিশ্চিত করেছে। সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) নেতা এবং গত চার দশক ধরে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

সন্তু লারমার সফর সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র দ্য হিন্দুর সাথে কথা বলার সময় জানিয়েছে, জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা গত শনিবার কলকাতায় পৌঁছেছেন এবং তিনি এই সপ্তাহে ভারতের জাতীয় রাজধানী দিল্লিতে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার সফরের বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।

সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু বলছে, বাংলাদেশ পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমাদের তাদের সংস্কৃতি ও ভাষা থেকে বঞ্চিত করছে দাবি করে সন্তু লারমা গত মাসে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকাটি মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্তবর্তী চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি বড় অংশ নিয়ে গঠিত এবং সেখানে অনেক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে।

কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটিতে কয়েক দশক ধরে জাতিগত বিদ্রোহের পর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে শান্তি নিশ্চিত করা হয়। বৌদ্ধ, হিন্দু এবং খ্রিস্টান সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোসহ বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যার আবাসস্থল হওয়ায় এই অশান্ত অঞ্চলের প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে।

দ্য হিন্দু বলছে, শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে স্বাক্ষরিত ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন সন্তু লারমা। এছাড়া জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার এই সফর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন জাতিগত আন্দোলনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান এলাকায় বাংলাদেশ সরকার বসতি স্থাপনের সুযোগ দেওয়ায় রোহিঙ্গা সংকটের যেকোনও ভবিষ্যৎ সমাধানে সন্তু লারমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে বোঝা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়ে আসলেও সেই প্রক্রিয়াটি এখনও শুরু হয়নি। আর এতে করে সংকট সমাধানের নানা বিকল্প খোঁজা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত শনিবার বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে বেইজিং। সেদিন ঢাকায় কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে চীনা ওই রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নিচ্ছে তার সরকার।

এদিকে হঠাৎ সন্তু লারমা ভারত সফর নিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে নানা আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। পাহাড়ি-বাঙালি বাসিন্দারা বলছেন, শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ি ও বাঙালিরা শান্তিতে আছি। অন্ধকার থেকে আলোর পথে আছি। রাস্তাঘাটসহ পুরো অঞ্চলে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। অথচ পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে মিথ্যা প্রোগান্ডা চালাতেই সন্তু লারমা গোপনে ভারতে গেছেন। তার সশস্ত্র বাহিনীর চাঁদাবাজি নিয়ে পাহাড়ে এখনো সহিংস ঘটনা ঘটছে বলে পার্বত্যাঞ্চলবাসীর দাবি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্যাঞ্চল, ভারত, সন্তু লারমা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন