parbattanews

সফল নারী উদ্যোক্তা লেকি চাকমা তার ব্লক-বুটিক যাচ্ছে বিদেশেও

এইচ এম প্রফুল্ল, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ির সফল নারী উদ্যোক্তা লেকি চাকমা এখন অনেকের কাছেই অনুকরণীয়। থ্রিপিচ, শাড়ি, ফতোয়া; এমনকি পাহাড়ি নারীদের সবচেয়ে পছন্দের পরিধেয় পিনন-খাদিতে ব্লক বা বুটিকের আকর্ষণীয় ডিজাইন করে তিনি এখন বেশ আলোচিত মুখ। ডিজাইনে ভিন্নতার কারণে এই নারীর নিপূণ হাতের পোশাক ও নানান হস্তশিল্প এখন সবার কাছে জনপ্রিয়। তার ব্লক-বুটিক ও নকশা করা পোশাক এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে।

এ নারী উদ্যোক্তা শুধু নিজে স্বালম্বী হননি, বহু বেকার নারীকেও আয়ের পথ দেখিয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করায় লেকি চাকমা ইতিমধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু পৃষ্টপোষকতার অভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারছেন না তার মতো পাহাড়ের বহু নারী উদ্যোক্তা।

লেকি চাকমা পার্বত্যনিউজকে জানান, ঢাকার একটি প্রসিদ্ধ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ২০০৯ সালে খাগড়াছড়ি শহরের ‘নিউজিল্যান্ড’ এলাকায় ছোট্ট পরিসরে নিজেই ব্যবসা শুরু করেন। অন্যরকমের ফ্যাশন শৈলীর কারণে অতি কম সময়ের মধ্যেই তার ব্লক-বুটিক ও নকশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ব্লক-বুটিকের অর্ডার (চাহিদাপত্র) নিয়ে আসে সুদূর ভারত ও  শ্রীলংকাসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরাও। দিনে দিনে বাড়তে থাকে লেকি চাকমার আয়। মাসে ১০/১৫ লাখ টাকার অর্ডার পাওয়ার রেকর্ডও আছে লেকি চাকমার। খরচ বাদ দিয়ে মাসে তিন/চার লাখ টাকা আয় করার রেকর্ডও রয়েছে।

ব্লক-বুটিকের প্রশিক্ষক হিসেবে বিসিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেও আয় করছেন লেকি। তিনি কাজ শেখান বেকার নারীদের। তার কাছে কাজ শিখে এখন ঘরে বসে আয় করছেন বহু নারী। লেকি চাকমার কাছ থেকে সৌকর্যময় পোশাক ক্রয় করে অনেক নারী নিজেরাও ব্যবসা করছেন। লেকি চাকমার কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক নারী উদ্যোক্তাই লাভবান হচ্ছেন।

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করায় ইতোমধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন লেকি চাকমা। লেকি চাকমা জানান, তিনিসহ ২০জন বেকার নারী মিলে একটি সমিতি গড়ে তুলেছেন। যা লাভ হয় ২০জনে ভাগ করে নেন।

লেকি চাকমার মতে, সারাদেশে নারী উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে এসএমই ঋণের সুযোগ পেলেও পাহাড়ের নারীরা বঞ্চিত। সমিতির সদস্য পঙ্গজীবি চাকমা ও কুকি চাকমা জানান, এক সময় তারা বেকার থাকলেও লেকি চাকমার সাথে সমিতি গড়ে তোলে তারা এখন অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী।

খাগড়াছড়ি বিসিকের ব্যবস্থাপক একে এম সাদেকুর রহমান বলেন, নারী উদ্যোক্তা ও কোমর তাঁতীদের বিসিক সাধ্যমত সহযোগিতা করছে। তবে ব্যাংক ঋণের সুযোগ থাকলে খাগড়াছড়ির কুটির শিল্পখাত ঘুরে দাঁড়াতো বলে তিনি মত দেন।

লেকি চাকমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা, ‘নিউজিল্যান্ড ফ্যাশন এন্ড বুটিক হাউজ’ এর পাশেই ব্লক ও বুটিকের ওপর ট্রেনিং সেন্টার চালুর। ইতোমধ্যে ২০/২৫জন বেকার নারীকে প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন তিনি।

 

সূত্র: পাক্ষিক পার্বত্যনিউজ, বর্ষ ১, সংখ্যা ১

Exit mobile version