parbattanews

সমুদ্র পথে নিরবে চলছে রোহিঙ্গা পাচার

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো থেকে সমুদ্র পথে নিরবে চলছে মানব পাচার। চলতি বছরের গত ৬ মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে যাওয়া প্রায় তিন হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড নিরাপত্তা বাহিনী। কক্সবাজারের আশ্রয় ক্যাম্প গুলো থেকে স্বজাতি পাচারকারীদের হাত ধরে সমুদ্র পথে নানা কৌশলে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ অবৈধ ভাবে সমুদ্র পথে থাইল্যান্ড হয়ে, কিছু অংশ বাংলাদেশ ও সামান্য অংশ ভারত হয়ে জাল পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে পাড়ি দেয়। এদের বিশাল অংশ তরুণ-যুবক শ্রেণীর। যাদের বয়স ২৫-৩৫ বছরের মধ্য বলে জানা গেছে। এ বয়সী রোহিঙ্গারা বিয়ে করতে মরিয়া হয়ে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবির ও আশপাশের দালালদের শরণাপন্ন হচ্ছে। এ সব মানব পাচারকারী চক্র উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো ও রাখাইন থেকে সুন্দরী কিশোরী ও যুবতীদের ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া পাঠাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে রোহিঙ্গাদের একটি উগ্রপন্থী গ্রুপের তত্বাবধানে ক্যাম্প গুলো থেকে শত শত রোহিঙ্গা সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ছাড়ছে। এ গ্রুপের নেতারা ক্যাম্প থেকে যেসব রোহিঙ্গা মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্য বের হবে এবং মালয়েশিয়া যার কাছে যাবে উভয় পক্ষ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকে। কোন ক্যাম্পের কোন ব্লকে কতটি ঘর রয়েছে ও কোন ঘরে কতজন লোক আছে তা তাদের লোকজনের নিকট হিসেব থাকে। ক্যাম্পগুলোতে যে সকল মাঝি বা মনোনীত নেতা রয়েছে তারাই মানব পাচার সহ সব কিছুর তদারকি করে থাকে বলে জানা যায়।

বাংলাদেশ ও রাখাইন থেকে পাচার হয়ে যাওয়াদের স্পন্সর বা গ্রহীতা মালয়েশিয়ায় নির্দ্দিষ্ট দালালের শরণাপন্ন হয়। তখন দালাল বা রোহিঙ্গা উগ্রপন্থীদের লোকদের নিকট তাদের পূর্ব নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করা হলেই থাইল্যান্ডের জঙ্গল থেকে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া বর্ডার পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। এক্ষেত্রে পাচারকৃত রোহিঙ্গারা যাচ্ছে স্বেচ্ছায়। এরা মালয়েশিয়ার বিভিন্ন রাবার, পাম্প অয়েল প্লান্টেশন,ছোট ও মাঝারী কল কারখানায় কম মজুরীতে নিয়োজিত করে মালয়েশিয়ানরা।

থাইল্যান্ড পুলিশ সূত্র রয়টার্সকে জানায়, চলতি বছর এ পর্যন্ত থাই উপকূল থেকে ৯৭৪ জনকে উদ্ধার করেছে। গত বছর থাইল্যান্ড উপকূল থেকে উদ্ধার হয়েছিল ৬২২জন। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ২০ জুলাইও ৬০ জন সহ চলতি বছরে এদেরকে হাজারের মত রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে বলে জানা যায়।অন্যদিকে বাংলাদেশের পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত অন্তত সাত শতাধিক মালয়েশিয়া গামী রোহিঙ্গা নারী,শিশু ও পুরুষদের উদ্ধার করেছে বলে জানা যায়।

জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম তাদের মে মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের এ পর্যন্ত তারা ৪২০ টি মানব পাচারের ঘটনা উদঘাটন করেছ। এ গুলোর সবই উখিয়া ও টেকনাফে। উখিয়া ও টেকনাফে আইওএম সহ অর্ধ শতাধিক দেশী বিদেশী এনজিও মানব পাচার প্রতিরোধে কাজ করছে।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একাধিক এনজিও কর্মী জানান, উদঘাটিত ঘটনা গুলোর চেয়ে কয়েক শত গুণ বেশী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানব পাচারের ঘটনা ঘটছে। যে গুলো উদঘাটন করতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা কমিউনিটির তেমন সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

বরং অনেক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করে। ফলে অহরহ মানব পাচারের ঘটনা ধামাচাপা পড়ে থাকায় প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা সম্ভব হয় না। এতে দেখা গেছে অনেক রোহিঙ্গা কিশোরী,মহিলা জোর পূর্বক পাচারের শিকার হলেও আইনানুগ তেমন কোন সহায়তা করা যায় না। কারণ এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা দালাল শ্রেণীর মধ্যস্বত্ব ভোগীরা নিজেদের ফায়দা লুটে নিচ্ছে।

Exit mobile version