সম্পদের মোহ ও অহংকার যেভাবে ডেকে এনেছিল কারূনের করুণ পরিণতি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে পূর্ববর্তী যুগের যেসব অহংকারী, দাম্ভিকের অবাধ্যতা ও করুণ পরিণতির কথা উল্লেখ করেছেন কারূন তাদের একজন। কারূন ছিল বনী ইসরাঈলের নবী মুসা আ.-এর যুগের। সে মুসা আ.-এর চাচাতো ভাই ছিল।
তাকে আল্লাহ তায়ালা প্রচুর সম্পদ দিয়েছিলেন। তার ধন-ভাণ্ডার এতো বিশাল ছিল যে, এর চাবি বহনের জন্য আলাদা বাহিনী ছিল। কোনো শক্তিশালী মানুষের পক্ষেও কারূনের ধন-ভাণ্ডারের বিশাল চাবি বহন করা সম্ভব ছিল না। তা বহনের জন্য ৬০টি খচ্চরের প্রয়োজন হতো।
কারূন এই বিশাল সম্পদ পেয়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়নি, উল্টো সম্পদের কারণে অহংকারবোধ করতো এবং এসব তার নিজের অর্জিত বলে দাবি করতো। তার সম্প্রদায়ের নেককার লোকেরা তাকে এই সম্পদ নিয়ে গর্ব না করার উপদেশ দিলেন।
তারা তাকে বললেন, সম্পদ নিয়ে গর্ব করো না, আল্লাহ তায়ালা দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না। আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তার মাধ্যমে আখিরাত অনুসন্ধান করো। অর্থাৎ, ভালো কাজে ব্যয় করে সওয়াব অর্জনের চেষ্টা করো।
তারা তাকে সৃষ্টি জীবের প্রতি অনুগ্রহ করতে বললেন। মানুষের সঙ্গে ঝগড়াঝাড়ি, দুর্ব্যবহার ও জমিনে ফিতনা, ফাসাদ সৃষ্টি থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিলেন।
এই উপদেশের বিপরীতে কারূনের জবাব ছিল, আমার জ্ঞানের কারণে আমি এই সম্পদ লাভ করেছি। এই উপদেশ মানার কোনো প্রয়োজন নেই আমার। আমি এসবের উপযুক্ত বলেই তা লাভ করেছি।
কারূন তার সম্পদ ও নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য প্রায় সময় শহরে তার বিশাল বাহিনী ও বহর নিয়ে বের হতো। একদিন সে দামি পোশাক পরে গাড়িতে চড়ে বিশাল বাহিনী নিয়ে শহরে বের হলো। তার এই জাকজমকপূর্ণ শোভাযাত্রা দেখে পার্থিব সম্পদ লাভে আগ্রহীরা ঈর্ষাবোধ করলো এবং তারাও এমন সম্পদ কামনা করলো। তাদের এমন অবস্থা দেখে তৎকালীন বুদ্ধিজীবী ও ইবাদতগুজার ব্যক্তিরা তাদের বললেন, তোমাদের জন্য আফসোস। আখিরাতের জীবনে আল্লাহ তায়ালা যে পুরস্কার দেবেন তাই শ্রেষ্ঠ, অধিকতর স্থায়ী ও উন্নত।
ধন সম্পদ নিয়ে কারূনের এই ঔদ্ধত্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে শাস্তি দিলেন এবং ধ্বংস করলেন। একদিন সে তার অভ্যাস অনুযায়ী নিজের ক্ষমতা ও সম্পদের জৌলুশ দেখানোর জন্য বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে শহরে বের হলো। এ সময় মুসা আ. এক জায়গায় মানুষকে আল্লাহ তায়ালার বাণী শুনাচ্ছিলেন, তাদেরকে রবের অনুগ্রহ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলছিলেন। কারূন মুসা আ. পাশ দিয়ে অতিক্রমের সময় মজলিসের অনেকেই তার দিকে ফিরে তাকালো।
মুসা আ. এই পরিস্থিতি দেখে তাকে ডাকলেন এবং তার এমন করার কারণ জানতে চাইলেন। সে মুসা আ.-কে বললো, তুমি নবুয়ত পেয়ে আমার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছো, কিন্তু মনে রেখো আমি সম্পদ অর্জন করে তোমার থেকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছি। তুমি আমার শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস না করলে আল্লাহর কাছে আমার বিরুদ্ধে বদদোয়া করো, আমিও তোমার বিরুদ্ধে বদদয়ো করবো, দেখি কার দোয়া কবুল হয়।
মুসা আ. তার কথায় রাজি হলেন। এরপর জনতার সামনে প্রথমে কারূন বদদোয়া করলো। কিন্তু তার দোয়া কবুল হলো না। এরপর মুসা আ. কারূনের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ আপনি জমিনকে নির্দেশ দিন, জমিন যেন দাম্ভিক কারূন ও তার বাহিনীকে গ্রাস করে। আল্লাহ মুসা আ.-এর দোয়া কবুল করেলেন। জমিন প্রথমে কারূনের পা পর্যন্ত গ্রাস করলো। এরপর তার হাঁটু পর্যন্ত গ্রাস করলো। তারপর কাঁধ পর্যন্ত। এরপর তার পুঞ্জিভূত সম্পদসহ তাকে গ্রাস করে নিলো মাটি।
কাদারা রহ. থেকে বর্ণিত, কারূন ও তার সম্প্রদায় কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিদিন একজন মানুষের শরীরের পরিমাণ তলিয়ে যেতে থাকবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—
فَخَسَفۡنَا بِهٖ وَ بِدَارِهِ الۡاَرۡضَ ۟ فَمَا كَانَ لَهٗ مِنۡ فِئَۃٍ یَّنۡصُرُوۡنَهٗ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ ٭ وَ مَا كَانَ مِنَ الۡمُنۡتَصِرِیۡنَ
অতঃপর আমি কারূন ও তার প্রাসাদকে মাটিতে দাবিয়ে দিলাম। তখন তার জন্য এমন কোন দল ছিল না, যে আল্লাহর মোকাবিলায় তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে সক্ষম ছিল না। (সূরা কাসাস, আয়াত : ৮১)