সেনাসদরে ব্রিফিং : পাহাড়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে

সরকারের নির্দেশনা পেলে নির্বাচনসংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী

fec-image

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ‘অফিসিয়ালি’ এখনও সেনাবাহিনীকে কিছু জানানো হয়নি। সরকারের নির্দেশনা পেলে নির্বাচনসংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী।

বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।

এক সাংবাদিক জানতে চান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কী ভূমিকা রাখবে, জবাবে কর্নেল স্টাফ শফিকুল বলেন, ‘আমরা এখনও সরকারের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি কোনো নির্দেশনা প্রাপ্ত হইনি। তবে সরকার নির্দেশনা দিলে নির্বাচনসংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করব।’

‘মব ভায়োলেন্স’কে (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা) সেনাবাহিনী কীভাবে দেখছে, এটি বেড়েছে নাকি কমেছে, নাকি নীরবে চলছে—জানতে চাইলে সেনা কর্মকর্তা শফিকুল বলেন, ‘মব ভায়োলেন্স’ কিংবা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী যেকোনো পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং করবে।

আমরা ‘মব ভায়োলেন্স’ অনেকাংশে কমিয়ে এনেছি। রংপুরের ঘটনাটিতে যে ‘মব ভায়োলেন্স’ ঘটেছিল সেখানে সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।’

তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহার সময় সেনাবাহিনী বেশ সক্রিয় ছিল। যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া ভাড়ার নামে অতিরিক্ত টাকা ফেরতের পাশাপাশি যানজট নিরসনেও কাজ করেছে সেনা বাহিনীর সদস্যরা।

এবার সেনাবাহিনীর পুরুষ অফিসারের পাশাপাশি নারী অফিসার এবং সৈনিকরা রাস্তায় নেমে দিনে–রাতে টহল ও যানবাহন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেছে। ১ হাজার ২৫৫টি গাড়ি থেকে অতিরিক্ত ভাড়ার ৩৫ লাখ টাকা যাত্রীদের হাতে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

সেনাবাহিনীর তৎপরতার কারণে গত ঈদের চেয়ে এবার ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে সেনাবাহিনীর ইচ্ছা, প্রবণতা, সিনসিয়ারিটি, সততা এবং হার্ড ওয়ার্কের জন্য।’

গত ১০ জুন জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ফুটবল ম্যাচ চলাকালে সেনা সদস্যের হাতে এক পতাকা বিক্রেতার মারধরের শিকার হওয়ার বিষয়টিও ওঠে সংবাদ সম্মেলনে। জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল ম্যাচ ছিল।

সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য যতটুকু করা দরকার, করা হয়েছে। এটি একটি দুঃখজনক এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল। পরবর্তী সময়ে ওই পতাকা বিক্রেতাকে ডেকে সমবেদনা জানিয়েছি এবং ব্যবসা প্রসারের জন্য এক লাখ টাকা দেওয়া হয়।’

মাসখানেক ধরে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতের পুশইনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড এবং কোস্ট গার্ড সতর্ক আছে। গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সেনাবাহিনী অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাহাড়ের অনেক এলাকায় পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা শিগগিরই প্রত্যাহার করা হবে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয় ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করানোর জন্য তারা সশস্ত্র গ্রুপকে ব্যবহার করাচ্ছে’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনাদের মতো এই প্রতিবেদন আমরা দেখেছি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য এই মুহূর্তে নেই।

সংবাদ সম্মেলনে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, এক্সেল বাবুকে গ্রেপ্তার এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ অস্ত্র, মাদক উদ্ধারের তথ্য তুলে ধরা হয়। গত তিন সপ্তাহে সেনাবাহিনী ৫৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ৯৯০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৯৯৬ জনকে এবং এ পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ২৬২ জনকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে।

কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, শিল্পাঞ্চল এলাকায় নিরাপত্তা বিধানে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

গত ২৭ মে সেনা সদরে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভায় সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ঈদের আগেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় ও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন, সেনাবাহিনী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন