সেমিনারে মেহেদী হাসান পলাশ

বন্দর, করিডর ইস্যুতে শব্দগত ব্যাখ্যা পরিবর্তন করলেও সরকার দেশবাসীর উদ্বেগে কর্ণপাত করছে না

fec-image

সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও পার্বত্যনিউজের সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশ বলেছেন, বন্দর, করিডর ও নির্বাচন নিয়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ তাদের অবস্থান পরিস্কার করলেও বর্তমান সরকার পরিস্কার করছে না।

শব্দ ও ব্যাখ্যাগত পরিবর্তন, ধোঁয়াশা ও জটিলতা সৃষ্টি করে ভিন্ন বয়ান সামনে আনলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই অবস্থানে অটল রয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রমে জনগণের কোন দাবি বা চিন্তা প্রতিফলিত হচ্ছে না, বরং সরকার তাদের নিজস্ব চিন্তা মানুষের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের একটা নিজস্ব বন্দর প্রয়োজন। জাতীয় দুর্যোগ, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার স্বার্থে আমাদের একটি জাতীয় বন্দর থাকতে হবে। সরকার ডিপি ওয়ার্ল্ড ও অন্য কোনো বিদেশী কোম্পানীকে জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা বজায় রেখে উপকূলীয় এলাকায় নতুন বন্দর স্থাপনের অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের জাতীয় বন্দর হিসেবে থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, মানবিক করিডরের নামে দেশকে বার্মা এক্টের বাস্তবায়ন ক্ষেত্রে পরিণত করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশে নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ২৭ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

“করিডর/চ্যানেল, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ (সেন্টমার্টিন), বন্দর ও দেশীয় বাণিজ্য সংকট: দেশের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য” শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি নামের একটি সংগঠন। আজ ২৭ মে ২০২৫ (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তাহরিকে খাতমে নুবুওয়্যাত-এর আমির ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেব বলেন, “দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এখনই যদি সকল রাজনৈতিক, ইসলামিক, সামাজিক দল ঐক্যবদ্ধ না হয়, তাহলে স্বাধীনতা ধরে রাখা যাবে না; অচিরেই এই স্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে যাবে।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘দশ মাসে এই সরকার কোনো সংস্কার করতে পারেনি। মৌলিক কাজ বাদ দিয়ে কেন এদিকে আসলো? এর মানে হলো করিডোর, সেন্টমার্টিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম একই সূত্রে গাঁথা।’

বর্তমান সরকার পশ্চিমাদের তৈরি এবং এটি তাদের প্ল্যান ‘এ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি মোড়ল রাষ্ট্র বাংলাদেশে ‘রোল প্লে’ করছে। দেশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করতে তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত। পশ্চিমারা যদি তাদের স্বার্থে ব্যর্থ হয়, তাহলে প্ল্যান ‘বি’-‘সি’ ব্যবহার করবে। ফলে সবাইকে এখনই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যদি এদেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকে এবং ইসলামের পক্ষে থাকে তাহলে এদেশের কোটি কোটি জনগণ সেনাবাহিনীর পক্ষে রাজপথে থাকবে। কোন বিদেশী শক্তি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

আলোচনা সভায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদ্রিস নদভী বলেন, সংস্কারের দায়িত্ব এই সরকারের নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অংশ হলেও সেখানে আইন ভিন্ন।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ সারাদেশে জায়গা কিনতে পারলেও বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে (রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি) জায়গা কিনতে পারে না। এই আইন সংস্কার করা প্রয়োজন। প্রতিটা নাগরিককে সমান অধিকার দেওয়া প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, সরকার এবং সেনাবাহিনী বাংলাদেশের জাতীয় শক্তি। এই দুটিকে বিভক্তি করা যাবে না। কিছু মানুষ না বুঝে সেনাবাহিনী এবং সরকারকে বিভক্ত করতে চাচ্ছে। যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।

সভার সভাপতি স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, করিডোর শব্দের পরিবর্তে এখন আমরা রাখাইনে মানবিক চ্যানেল দেয়ার অস্পষ্ট বক্তব্য শুনছি।

আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি- রাখাইনে করিডর/চ্যানেল কিংবা ভিন্ন নামে কিছু দিতে হলে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সাথে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের টেকসই লাভক্ষতির চুল-চেরা আলোচনা-পর্যালোচনা না করে এবং জনগণের কন্সেন্ট (সম্মতি) না নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার মানবিক চ্যানেল দিতে পারে না।

একইসাথে প্রচুর ভারতীয় স্টাফ কর্মরত এবং আমেরিকা ও ইজরাইলের সাথে একাধিক সমঝোতা ও চুক্তিবদ্ধ বিদেশী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডকে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালনায়ও যুক্ত করতে পারে না।

এখানে রাখাইনে মানবিক চ্যানেলের সম্পূরক (সাপ্লিমেন্টারি) হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশী অপারেটরের হাতে ন্যস্ত করা হচ্ছে কি না সেটিও স্পষ্ট করা দরকার। নইলে দেশব্যাপী শত প্রতিবাদ সত্ত্বেও, নিজেদের টাকায় তৈরী লাভজনক নিউমুরিং টার্মিনালটিকে মার্কিন মদদপুষ্ট ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে ন্যস্ত করার এতো তোড়জোর কেন?

বন্দর ও চ্যানেলের মধ্যে যোগসূত্র থাকায় এতে প্রক্সি যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরী হবে। চীন-মিয়ানমার বনাম আমেরিকা-ভারত। এই চার রাষ্ট্রের স্বার্থের দ্বন্দ্বে বিনা স্বার্থে বাংলাদেশ হবে বলির পাঠা! এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অস্থিতিশীল হবে।

পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উস্কে দেয়া হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা আরো দীর্ঘায়িত হবে। এদিকে, মানবিক চ্যানেলের শুরুর কথা বলা হলেও এর শেষ পরিণতি কী, কীভাবে শেষ হবে এর কোনো রূপরেখা সরকার দিচ্ছে না।

কাজেই জনগণকে অন্ধকারে রেখে ভিন্ন নামে চ্যানেল দেয়া ও বন্দর পরিচালনায় বিদেশীদের নিয়ে আসা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আম জনতার দলের সদস্য সচিব তারেক রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইঞ্জি. শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব, গণমাধ্যম বিষয়ক সংগঠন “মিডিয়া মনিটর” এর প্রধান সমন্বয়ক আহসান কামরুল প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহিউদ্দিন রাহাত।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্যনিউজ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন