সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, দুশ্চিন্তায় পেকুয়ার জেলেরা
সাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় সংসার চালানোর চিন্তায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপকূলের জেলেদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননের জন্য বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত।
এ সময় পেকুয়ার উপকূলের জেলেদের থেকে জানা যায়, রোজার মাসে সাগরে মাছ ধরা পড়েনি। ঈদের পর থেকে সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এরই মধ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন।
শুক্রবার (১৯ মে) মধ্য রাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আগামী ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ। মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতিবছরের মতো এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরার ট্রলার যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর সমুদ্রে মৎস্য প্রজনন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। সরকারে নিষেধাজ্ঞার কারণে মগনামা – কুতুবদিয়া চ্যানেল, উজানটিয়া করিমদাদ মিয়া ঘাট, রাজাখালী সুন্দরী পাড়া, আরব শাহ বাজারের নদীর মোহনায় সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে আছে শত শত ফিশিং ট্রলার। ফাঁকে ফাঁকে আরও ট্রলার এসে যুক্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সাগর থেকে সব মাছ ধরার ট্রলার উপকূলে নোঙর করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরার ট্রলার যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর সমুদ্রে মৎস্য প্রজনন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, কক্সবাজারের আট উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় ছোট বড় প্রায় ছয় হাজার ট্রলারে লক্ষাধিক জেলে মাছ ধরায় নিয়োজিত রয়েছে। গত দুইমাস ধরে বেশিরভাগ ট্রলার বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকার সমুদ্র মোহনায় নোঙর করে আছে। কারণ সমুদ্রে মৎস্য সংকটের কারণে ট্রলারগুলো মাছ শিকার বন্ধ রেখেছে।
এফবি বিসমিল্লাহ ফিশিং নামের এক ট্রলারের মাঝি নুরুল হোছাইন জানান, সাগরে গত দুই মাস ধরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম। এর মধ্যে আবার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। জানি না কীভাবে পেট চলবে। মগনামা কাকপাড়া জেলে পল্লীতে এখন জাল মেরামত ও ট্রলারের মেশিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।
পেকুয়ার রাজাখালী এলাকার ছলিমুল্লাহ মাঝি তার দলের ১৫ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে ঈদ করতে বাড়ি এসেছিলেন। মাছ ধরা বন্ধের আগে একবার সাগরে যাওয়ার চেষ্টা করেও যেতে পারেননি। তিনি বলেন, কয়েক দফায় সাগরে গিয়ে মাছ না পাওয়ায় ট্রলারের মালিক আগ্রহ দেখায়নি। এতে তারা জাল মেরামত করে সময় পার করছেন। তাদের মতে পেকুয়ার জেলে পল্লীগুলোতে জাল ও ট্রলার মেরামতের কাজ করে সময় পার করবেন জেলেরা।
নুরুল আলম, আহমদ কবির, নুরুল হোছাইন নামে কয়েকজন জেলে জানান, বাপ-দাদার দেখানো পথ ধরে মাছ ধরেই তাদের জীবন-জীবিকা চলে। সাগরে মাছ না পেলে তাদের পরিবারে আহার জুটে না। সামনের দিনগুলো কেমন যাবে এনিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই।
তারা জানান,অভাব-অনটনেই চলে আমাদের সংসার। সরকারি সাহায্যে তো আর পেট ভরে না। গত দুই মাসে সাগরে মাছ কম পাওয়ায় মালিকের (ট্রলার মালিক) কাছ থেকেও অগ্রিম টাকাও নিতে পারছি না। রাজাখালীর বাসিন্দা ট্রলার মালিক নুরুল হোছাইন বলেন, সাগরে মাছের আকালে পড়ে এর সঙ্গে জড়িত জেলে, মাছ ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিক ব্যাংক ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হওয়ার অবসাথা হয়েছে।
এদিকে জেলে নেতা আবদুল গফুর বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সাগরে জেলেরা মাছ ধরতে পারেনি আবার “সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে গভীর সাগরে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু উপকূলের কাছাকাছি ছোট মাছ ধরার নৌকার ওপর কেন এই বার্তা, তা বোধগম্য নয়। জেলেদের পরিবারের আর্থিক সঙ্কটের কথা বিবেচনা করে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা কমিয়ে ৩০ দিনে করার দাবি জানাচ্ছি।
কক্সবাজার ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, এ বছর ভরা মৌসুমে সাগরে মাছের আকাল ছিল। এতে বেশিরভাগ ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ী লোকসানে পড়েছেন। জেলেরাও মাছ শিকার করতে না পারায় আর্থিক সংকটে রয়েছেন। ফলে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকারিভাবে জেলেদের পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ারুল আমিন বলেন, বঙ্গোপসাগরে ইলিশের প্রজননসহ মৎস্যভাণ্ডার সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ৬৫ দিনে পেকুয়ার ৫ হাজার ১ শত জেলের জন্য ২ শত ৭৮ দশমিক ১ শত ৫২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। জেলেদের তালিকা অনুযায়ী প্রথমবার জনপ্রতি ৫৬ কেজি এবং ২য় বার জনপ্রতি ৩০ কেজি করে তা বিতরণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সাগরে ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কেউ এ সময়ে সাগরে গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়াও সাগর উপকূলে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।