parbattanews

সাজেকে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় ১০ মেট্রিকটন খাদ্য বরাদ্দ দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়

DSC_0067 copy
সাজেক প্রতিনিধি :

রাঙামাটি সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় জুমিয়া পরিবারগুলোতে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় খাদ্য শষ্য বরাদ্দ দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানাযায়, বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রাথমিক পর্যায়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুকুলে ১০ মেট্রিকটন খাদ্যশষ্য বরাদ্দ প্রদান করেছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আরো বরাদ্দ দেওয়া হবে।

পার্বত্য চট্রগ্রামের সবছেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম পার্বত্যনিউজ.কম এ “দশ কেজি চাউলের আশায় প্রায় ৯০ কিমি পথ পাড়ি দিল কাউলা ত্রিপুরা” সংবাদটি প্রচারের পর সাজেকের খাদ্যাভাবের খবরটি সকলের নজরে আসে এরপর থেকে জাতীয় বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক্ মিডিয়াতেও এনিয়ে খবর প্রচার করে। এরপর নড়েচরে বসে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রনালয়।

উল্লেখ্য দুর্গম সাজেক ইউনিয়নে জুমিয়া পরিবার গুলোতে বিগত অড়াইমাস ধরে তীব্র খাদ্য সংকট চলছে। পাহাড়ের পাদদেশে জুম চাষ, বাঁশ ও বনজ সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে সাজেকের দূর্গম গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। কিন্তু এবছর জুম চাষে বিপর্যয় হওয়ায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস হ্রাস পাওয়ায় প্রাক- বর্ষা মৌসুম থেকে সাজেকের প্রায় ৪০টি দূর্গম গ্রামে আর্থিক অভাব দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে খাদ্যে। সাজেকের অধিকাংশ গ্রামে এখনও পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নাই। যার কারণে পায়ে হাঁটা পথে মাচালং বাজার থেকে কোন পণ্য ক্রয় করে এসব গ্রামে নেয়া পর্যন্ত খরচ পড়ে ক্রয়মূল্যের তিনগুণ। যার কারণে সাজেকের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ খাদ্য ক্রয় করতে পাচ্ছেনা। এতে করে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

সাজেকের কজতলী পাড়ার গ্রাম্য প্রধান কালা চাঁন ত্রিপুরা জানান, তাঁর গ্রামবাসীর প্রধান জুমিয়া পরিবার আর্থিক অনটনের কারণে তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছে। তারা জুম চাষ ও পাহাড় থেকে বনজ সম্পদ আহরণ করে জীবিকা চালায়। কিন্তু বিগত সময়ে জুম চাষে কম ফসল আসায় গত চৈত্র মাস থেকে কজতলী গ্রাম সহ অনেক গ্রামে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

সাজেক ইউপি’র সীমান্ত সংলগ্ন ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার দহিন্দ্র লাল ত্রিপুরা জানান, সাজেকের পুরান জোপুই, নতুন জোপুই, উদলছড়ি, পুরান থাঙনঙ, নতুন থাঙনঙ থারুম পাড়া-সহ ২০টির মতো গ্রামের মানুষ আর্থিক অভাবের কারণে চাল কিনতে পারছেনা। এসব গ্রামে প্রতি কেজি চাল বিক্রী হচ্ছে ৯০-১১০টাকা। জরুরী ভিত্তিতে যদি দূর্গত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ করা না যায় তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার সুশীলা চাকমা জানান, প্রতিবছর সাজেকের দূর্গম গ্রামগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এবার তীব্র ভাবে সংকট হওয়ার কারণ হচ্ছে জুমের ফসল কম হওয়া। খাদ্যের অভাবে দূর্গম গ্রামের মানুষগুলো কলা গাছের নরম অংশ খেয়ে আছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ সংকটে সবচেয়ে বেশী ভুগছে নারী ও শিশুরা।

বাঘাইহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল জানান, বাঘাইহাট ও মাচালং বাজারে পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু এলাকায় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বলে শুনেছে। যার মূল কারণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকা। পায়ে হাঁটা পথে মাচালং বাজার থেকে ব্যাটলিং কিংবা অন্যান্য বাজারে পণ্য নিয়ে যেতে খরচ পড়ে ক্রয়মূল্যের ৩-৪ গুণ। যার কারণে সেসব ব্যবসায়ীরা বেশী দামে পণ্য বিক্রী করছেন।

সাজেক ইউপি’র চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জানান, খাদ্য সংকটের কথা শুনে গত ২১ এপ্রিল দূর্গত এলাকার ৪১০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। এর আগে গত দু’মাস আগে থেকে খাদ্য সংকটের কথা উপজেলা পরিষদে মাসিক সমন্বয় সভায়

ইউএনও’কে অবগত করা হয়। সেখান থেকে অল্প কিছু ত্রান বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া জরুরী ভিত্তিতে দূর্গত এলাকার জন্য ৬শ মেট্টিক টন ত্রাণ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে এবং সমস্যের স্থায়ী সমাধানের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সাজেকে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তরান্বিত করার পক্ষে জোর দেন তিনি। তিনি আরও জানান গতকাল আমাকে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফোন করে বলেন পার্বত্যচট্রগ্রাম মন্ত্রানালয় থেকে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের অনুকূলে ১০ মেট্রিকটন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেগুলো এনে দ্রুত বিতরন করার জন্য।

Exit mobile version