সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার, কমছে বিদেশি অনুদান

fec-image

বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। তার মধ্যে দিন দিন কমে আসছে বিদেশি অনুদান। এতে চাপ বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে সরকারের দায়দায়িত্ব। এদিকে রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। অবনতি হচ্ছে দেশের আইন শৃঙ্খলার। এ অবস্থায় প্রত্যাবাসন’ই একমাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বলছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ।

মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখের বেশি। এসব রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে গত সাত বছরে একাধিকবার বৈঠক হলেও একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়া-রেশনসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ সরকার সাথে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। এদিকে বৈশ্বিক নানা কারণে দিন দিন কমে আসছে বিদেশি অনুদান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে বিদেশি অনুদান এসেছিল ১২৬ মিলিয়ন পাউন্ড। আর গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ মিলিয়ন পাউন্ডে। এতে বরাবরই রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণে বেগ পেতে হচ্ছে সরকারকে। তার মধ্যে রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। রোহিঙ্গারা বলছে টেকসই প্রত্যাবাসন হলেই নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যাবে। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে তারা জুড়ে দিচ্ছে নানা শর্ত।

রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, আমাদের জীবনের নিরাপত্তাসহ জাতীয় পরিচয় পত্র নিশ্চিত করলেই মিয়ানমার যাব। নয়তো যাব না। আমরা সেই গ্রাম, ঘরবাড়ি, গবাদি পশু, ক্ষেত-খামার সবকিছু এখনো মিস করি। আমাদের সব ফিরিয়ে দিতে হবে।

জাফর আলম নামে আরেক রোহিঙ্গা জানান, এই মুহূর্তে আমাদের দেশে (মিয়ানমার) আরকান আর্মি এবং জান্তা সরকারের মাঝে যুদ্ধ চলছে। তাদের একটি দল আমাদের নিতে চায়। মূলত আমাদের সামনে রেখে যুদ্ধে আমাদের হত্যা করতে চাই। আর ভুল নয়। জীবনের নিরাপত্তার পাশাপাশি আমাদের সব অধিকার ফিরিয়ে দিলে’ই নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে। এর আগে নয়।

আরেক রোহিঙ্গা নারী রহিমা বেগম জানান, বাংলাদেশ আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করছে। এরপরেও নিজের দেশের মায়া আলাদা। আমরা মিয়ানমার ফিরে যেতে চাই।

এদিকে গত রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় ৬ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে। প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নের চিত্র দেখে এবং প্রত্যাবাসন নিয়ে তাদের সাথে মিটিং করে।

এই প্রতিনিধি দলের সদস্য কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কথা হয়েছে। তারা বলছেন এই মুহূর্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলছে উত্তেজনা। নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তারা ফিরে যাবে।’ বিষয়টি সংসদীয় সভায় উত্তাপন করা হবে। মিয়ানমারের সাথে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জীবনমান দিন দিন উন্নত হচ্ছে। তারা এ দেশে ভালোই আছে। তাদের শিক্ষার মান বাড়ছে। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিক্ষিত ছিল ৫২ জন। আজ শিক্ষিত বা গ্রাজুয়েশন করা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩০ জন হয়েছে। তারা তাদের দেশে ফিরতে চায় তবে নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে যেতে চায়। তবে দিনদিন মাত্রাতিরিক্ত কমতে শুরু করেছে বিদেশি অনুদান। ২০১৭ সালে বিদেশি অনুদান এসেছিল ১২৬ মিলিয়ন পাউন্ড। আর গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ মিলিয়ন পাউন্ডে। এতে বরাবরই রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণে বেগ পেতে হচ্ছে সরকারকে। এতে সরকারের দায়দায়িত্ব আরও বাড়ছে। এই মুহূর্তে লক্ষ্যমাত্রা একটাই। সেটা হচ্ছে প্রত্যাবাসন।

কক্সবাজারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে অংশ নিতে এসে প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত রয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। এর প্রভাব দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পড়ছে। এদিকে প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার একাধিকবার বৈঠক করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত ৭ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। উলটো মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণে চলা সংঘাতের ফলে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে তাদের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের কারণে ইতিমধ্যে ৫ শতাধিক বিজিপি পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পরে তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নতুনভাবে আরও ১৩৮ জন পালিয়ে এসেছে।

দ্রুত সময়ের মধ্য রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো না হলে সামনে আরও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান সচেতন মহল। তাই প্রত্যাবসনই একমাত্র সমাধান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন