আনাই, আনু, ঋতুপর্ণা, মনিকা ও রুপনাদের তারকা খেলোয়াড় হয়ে উঠার নেপথ্য কারিগর ছিলেন স্কুল শিক্ষক ফুটবলপ্রেমী বীরসেন চাকমা। তিনি এ পাঁচ নারী ফুটবলারকে গড়ে তোলার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। নিজের বাসায় আশ্রয় দিয়েছেন। অর্থের জন্য অনেকের কাছে হাতও পেতেছেন। অনেক সময় নিজের জিপিএফ থেকে হাজার হাজার টাকা উত্তোলন করে খরচ করেছেন।
আজ আনাই, আনু, ঋতুপর্ণা, মনিকা ও রুপনারা দেশের ফুটবল তারকা। হিমালয় জয়ের পর তাদের দেশ আনন্দে ভাসছে। কিন্তু বাঘিনীদের তারকা খেলোয়ার হয়ে উঠার নেপথ্য কারিগর বীরসেন চাকমা, কৌশিক চাকমা ও সুইহ্লামং মারমাসহ অনেকের অবদান আড়ালে রয়ে গেছে। এই কারিগরদের নামও কারো নজরে আসছে না।
অপর দিকে খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলার দুর্গম সুমন্তপাড়ার গ্রামের মেয়ে মনিকা চাকমা। আনাই-আনুচিং ও মনিকাদের খেলাধুলা তো দূরের কথা মৌলিক অধিকারের অনেক সুবিধাই ছিল না এই দুই গ্রামে। তবে প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও ক্রীড়া নিপুণতা ছিল তাদের। এরা ছোট বেলা থেকে জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলতো।
কিন্তু তাদের সহযোগিতায় কেউ এগিয়ে আসেনি। বিষয়টি নজরে আসে রাঙামাটির মঘাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীরসেন চাকমার। তিনি আনাই, আনুচিং ও মনিকা চাকমাকে পরিবারসহ মঘাছড়ি নিয়ে যান। সেখানে তাদের থাকার বাড়ি করে দেন। আনাই, আনুচিং ও মনিকা তখন ৩য় শ্রেণিতে পড়তেন। বীরসেন চাকমা তাদের নিজ স্কুলে ভর্তি করে দেন। ঋতুপর্ণা ও রুপনাও ছিলেন একই স্কুলের শিক্ষার্থী। পিতৃহীন ঋতুপর্ণাকে নিজের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেন বীরসেন চাকমা। এভাবে তিনি তার বিদ্যালয়ে পুরো একটি ফুটবল টিম গড়ে তোলেন। বীরসেন চাকমা বর্তমানে কাউখালী উপজেলার উল্টা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
মঘাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পাশ করার পর বীরসেন চাকমা আনাই, আনুচি, মনিকা, ঋতুপর্ণা ও রুপনাদের ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন, যাতে টিমটা ঠিক থাকে।
তৎকালীন কাউখালী উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও বর্তমানে জুড়াছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার কৌশিক চাকমা বলেন, ১স্কুল শিক্ষক বীরসেন চাকমা আনাই, আনু, ঋতুপর্ণা, মনিকা ও রুপনাদের আজকের এই পর্যায়ে নিতে অনেক কষ্ট করেছেন। নিজের বাসায় আশ্রয় দিয়েছেন। অর্থের জন্য অনেকের কাছে হাত পেতেছেন। অনেক সময় নিজের জিপিএফ থেকে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে খরচ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘সকলের ঐকান্তিক চেষ্টায় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট মঘাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১১ সালে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন ও ২০১৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হয়। অনূর্ধ্ব-১৫ উচ্চ বিদ্যালয় পর্যায়ে কাউখালীর ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আনাই, আনুচিং, মনিকা, ঋতুপর্ণা ও রুপনারা ময়মনসিংসের কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালরে মারিয়া মান্ডা সানজিদাদের পরাজিত করে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যায়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন। এর পর জাতীয় দলে ডাক ও অন্তর্ভুক্তি। পরের গল্পতো সবারই জানা।’